সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে ক্রমে বাড়ছে মৌলবাদীদের দাপট। লাগাতার হামলার শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। গত দুর্গাপুজোয় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসার সাক্ষী থেকেছে দেশটি। এহেন পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি গণভবন থেকে ঢাকা ও চট্রগ্রামে ভারচুয়ালি যুক্ত হন৷ ওই অনুষ্ঠানে হাসিনা বলেন, “আমাদের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়কে আমি এটাই বলব আপনারা এদেশের মানুষ। কাজেই নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে না করে, মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। তাই সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরাও সেইভাবে আপনাদেরকে দেখতে চাই। জাতিরজনক এদেশ স্বাধীন করার পর আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন তাতে যে চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতাকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন অর্থাৎ সব ধর্মের মানুষ সমানভাবে ধর্ম পালন করবে এবং এই মাটিতে তাদের জন্ম সবার অধিকার নিয়েই বাস করবে, এটাই তার লক্ষ্য ছিল।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশে ভয়াবহ হামলার শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়। একের পর এক মণ্ডপে ভাঙচুর চালায় মৌলবাদীরা। তারপরও নড়াইল-সহ দেশের একাধিক জেলায় আক্রমণ নেমে আসে সংখ্যালঘুদের উপর। একইসঙ্গে, ভারতে নূপুর শর্মার ‘ইসলাম অবমাননা’ ইস্যুর পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এহেন পরিস্থিতিতে, হাসিনা বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে এখানে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছিল। জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রথমেই ঘোষণা বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও জনগণের চাপে সেটা করতে পারেনি, কিন্তু উদ্দেশ্য এটাই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এটা আমাদের দেশের এক শ্রেণি মানুষ মেনে নিতে পারেনি। আমরাই আওয়ামি লিগ জাতির পিতা সেই আদর্শকে বিশ্বাস করি এবং আমরাই শ্লোগান দিই ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলাদেশই একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী দেশ এখানে কিন্তু যেকোনও ইচ্ছা উৎসবে, সবাই সমবেত হয়, সে উৎসব সবাই উদযাপন করে।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে (Bangladesh) সংখ্যালঘুদের উপর হামলা-নির্যাতন নতুন নয়। জঙ্গি ও মৌলবাদীরা ছলছুতোয় হিন্দুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এবার ঘটনাস্থল ফের নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায়। এর আগে একই অভিযোগ তুলে নড়াইলে একটি কলেজের অধ্যক্ষের গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়। যার জেরে বাংলাদেশ জুড়ে তীব্র ধিক্কার ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এই কাণ্ডের জন্য ছাত্র-সহ একাধিক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সেই বিচারপ্রক্রিয়া কাজ চলছে। এর রেশ শেষ না হতেই ফের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.