সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভোটসন্ত্রাস ইস্যুতে আমেরিকাকে একহাত নিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর তোপ, ‘আমেরিকা যার বন্ধু হবে, তার শত্রু লাগে না।’ ক্ষোভ উগড়ে হাসিনা আরও বলেন, মার্কিন প্রশাসন কথায় কথায় অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলায়।
আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। শাসকদলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসা ও মানবাধিকার প্রসঙ্গে ঢাকার উপর চাপ বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। বাইডেন প্রশাসনের এহেন অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না ঢাকা। বৃহস্পতিবার রাতে পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সম্প্রচারিত লেটস টকে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সম্পদ গ্যাস। ৯৬ সালে অন্য কোম্পানির সঙ্গে আমেরিকাও গ্যাস উত্তোলন করে। তবে তারা গ্যাসটা বিক্রি করার কথা বললে, আমি আপত্তি করি। এর খেসারতও আমাকে দিতে হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে দেশের ভিতর আর বাইরের চক্রান্ত এক হয়ে গেল।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আজকে মানবাধিকারের কথা নিয়ে আমেরিকা প্রশ্ন তোলে। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, নিজের দেশের দিকে তাকায় না। রাষ্ট্রসংঘে আমি প্যালেস্টাইন ইস্যু তুলেছিলাম। ইইউতেও আমি যখন গেলাম, তখন খুব শক্তভাবে এই প্রশ্নটা তুলেছিলাম। প্যালেস্তিনীয় শিশু ও নারীদের মৃত্যু হচ্ছে। এখন কেন সবাই চুপ?এমনকী রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই-দুবার যুদ্ধ বন্ধের জন্য যে প্রস্তাব আসে, তাতে আমেরিকা ভেটো প্রয়োগ করে।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসিনা বলেন, “আমেরিকায় মানুষের জীবনের কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তারা অন্য জায়গায় এসে খবরদারি করে। এই মোড়লিপনা যে তাদের কে করতে দিল, আমি সেটাই জানি না। আমি এই বিষয়টি সবার আগে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরেছি এবং প্রতিবাদও করেছি। তারা নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক কথা বলে। যখন তাদের প্রশ্ন করা হয় বিএনপি ট্রেনে আগুন দিয়ে মা, শিশু পুড়িয়ে মারল। এ ব্যাপারে তাদের মুখ বন্ধ। কোনও কথা বলে না। কাজেই এদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে এদের নিজেদেরই একসময় খেসারত দিতে হবে। এটিই হল বাস্তব।”
উল্লেখ্য, ভোটমুখী বাংলাদেশের (Bangladesh) জন্য নতুন ভিসা নীতি চালু করেছে আমেরিকা। সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারীদের ‘সাজা’ দিতেই এই পন্থা অবলম্বন করেছে ওয়াশিংটন। যাকে ‘হাতিয়ার’করে হাসিনা সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে বিএনপির। কিন্তু হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এনিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এছাড়াও কীভাবে বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে সেই বিষয়েও জবাব চেয়েছে আমেরিকা।
এদিকে দেশের দক্ষিণ জনপদ জেলা বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভায় দলের দুই দলের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন জখম হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এই ঘটনা ঘটে। দলীয় সূত্র খবর, দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামি লিগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। হামলায় আহত সোহাগ (২৯) জানান, “জনসভায় যোগ দিতে পঙ্কজ নাথের নেতৃত্বে মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বরিশালে আসি। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে পৌঁছালে আওয়ামি লিগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে তারা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.