সুকুমার সরকার, ঢাকা: তিস্তা জলবণ্টন ইস্যু নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা এড়াতে চায় ঢাকা। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পর তিস্তা-গঙ্গা ইস্যু নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। জলবণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন করে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) কাছে একটি চিঠিও দিয়েছেন। তবে জলবণ্টন নিয়ে মোদি-মমতার দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে, এই ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ জুন দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিস্তা ও গঙ্গার জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশে একটি কারিগরি টিম পাঠানো হবে।
এসবের পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) গঙ্গাচুক্তি এবং তিস্তা আলোচনা নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন। অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা না করেই জলবণ্টনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। বাংলাদেশের (Bangladesh) সঙ্গে তিস্তার জলবণ্টন সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, বৈঠকে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা ও মতামত গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে তিস্তার জল প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার (Teesta) জলবণ্টন করা সম্ভব নয়। দীর্ঘ চিঠিতে তিনি আরও বলেন, তিস্তার জলবণ্টন এবং ফারাক্কা চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনাই রাজ্য সরকারের সম্পৃক্ততা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে করা উচিত নয়। পশ্চিমবঙ্গের জনগণের স্বার্থ সর্বাগ্রে, যার সঙ্গে কোনও মূল্যে আপস করা উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জলবণ্টন ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করলেও তা নাকচ করা হয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার অভিযোগ সারবত্তাহীন। গঙ্গা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি ও আপত্তি নিয়ে মুখপাত্র বলেছেন, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালে নবায়িত করার কথা। এই লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব অংশীদারকে রাখা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও নিয়মিতভাবে সেই কমিটির বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। রণধীর জয়সওয়ালের আরও বক্তব্য, গত ৫ এপ্রিলও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। খাবার ও শিল্পের জন্য জলের বিষয়টি ২০২৬ সালের পরেও চুক্তিতে রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার চিঠি পাঠিয়েছে। কমিটি ইতিমধ্যে তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন পরীক্ষানিরীক্ষা করছে।
জলবণ্টন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) বলেছেন, ”প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে আমার কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ঢাকার (Dhaka) নাক গলানোর কোনও দরকার নেই। কিছু বলারও দরকার নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো, মোদির সঙ্গেও। অন্যান্য সব দলের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভালো।” জলবণ্টন ইস্যুতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছেন, ”রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিষয় তাদের অভ্যন্তরীণ। আমাদের সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা স্মারক করে বা চুক্তি করে। ঐকমত্য হোক বা দ্বিমত, সেটা তাদের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.