সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পে আগ্রহী ভারত ও চিন দুদেশই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান এই প্রকল্পে কাজ করুক নয়াদিল্লি। কয়েকদিন আগেই চিন সফরে গিয়েছিলেন হাসিনা। যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল কূটনৈতিক মহলে। কারণ দিল্লি-বেজিং সংঘাতের কথা অজানা নয় ঢাকার। তিস্তা নিয়ে চিন থেকে কী বার্তা দেন মুজিবকন্যা সেদিকে কড়া নজর রেখেছিল ভারতও।
রবিবার চিন সফর নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তিস্তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তিস্তা আজকের না, এটা বহু যুগের প্রকল্প। এই বিষয়টি যুক্তফ্রন্টের ইলেকশন এবং আওয়ামি লিগের নির্বাচনী ইস্তাহারে অনেকবারই ছিল। তিস্তা প্রকল্প আমরা করব। ভারত ও চিন দুদেশই আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। চিন যাচাই করেছে ভারতও করবে। তার পর যাদের সঙ্গে আমাদের মত মিলবে তারাই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। চিন তৈরি আছে, তবে আমি চাই এটা ভারতই করুক। যেহেতু তিস্তার জলটা সেখানে আটকে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, চিনের প্রিমিয়ার লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গত সোমবার বেজিংয়ে যান হাসিনা। বৈঠকের পর দুই রাষ্ট্রনেতা সমস্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিল হস্তান্তর করেন। দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং সেক্টরে সহযোগিতা, ব্যবসা-বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চিন মৈত্রী সেতু, কৃষি পণ্য রপ্তানি, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে চিনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ে একটি প্রটোকলও সই করেছে দুদেশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে ৭টি ঘোষণাপত্র ও ২১টি মউ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
বলে রাখা ভালো, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে ঢাকায় আনাগোনা বেড়েছে চিনা আধিকারিকদের। ফলে বন্ধুদেশের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করছে ‘ড্রাগন’ সেদিকেই তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে দিল্লির। এই আবহে হাসিনার চিন সফর নিয়ে বেশ চর্চা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন হাসিনা। টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং। বার্তা দিয়েছিলেন ঢাকার সঙ্গে একযোগে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে কাজ করার। তার পর থেকেই বাংলাদেশকে কাছে টানতে আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে বেজিং। যা চিন্তা বাড়িয়েছে দিল্লির। এই পরিস্থিতিতে তিস্তা প্রকল্পে ভারতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন হাসিনা। যাকে দিল্লির কূটনৈতিক জয় হিসাবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.