সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারে তুঙ্গে গৃহযুদ্ধ। শুরুর দিকে জুন্টার পাল্লা ভারী থাকলেও ক্রমে শক্তিবৃদ্ধি করছে বিদ্রোহীরা। শুক্রবার সেদেশের রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বার্মিজ সেনা তথা ‘টাটমাদাও’ ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। যার আঁচ এসে পড়ছে পড়শি দেশ বাংলাদেশে। এই সংঘাতের জেরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা।
সূত্রের খবর, জুন্টার সেনা বিদ্রোহীদের উপর বিমান হামলা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় এই সংঘর্ষে অনেকে হতাহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গতকাল রাখাইনের রামব্রি টাউনশিপে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে দফায় দফায় বোমা ফেলা হয়েছে। এছাড়া বুচিডংয়ে একটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে জুন্টা সরকার বোমাবর্ষণ করেছে। এই হামলায় সেখানকার একটি স্থানীয় বাজার ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এতে বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটছেন।
এই প্রেক্ষিতেই পড়শি দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের আগমন ঠেকাতে সতর্ক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। কারণ পাঁচ বছর আগে দুপক্ষের সংঘর্ষে ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। যাতে চাপ বেড়েছে দেশের সরকারের। হিংসা, মানবপাচার এবং মাদক কারবারের কারণে ভয়ানক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের একাধিক রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি। যা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইন-সহ মায়ানমারের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। ওইসব জায়গা পুনর্দখল করতে জুন্টা সরকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যাতে ফের রোহিঙ্গার ঢল বাংলাদেশে না নামে, সেটা নিশ্চিত করতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। এই বিষয়ে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক আধিকারিক জানান, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে মায়ানমারে সংঘর্ষ চলছে। একজন রোহিঙ্গাও যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটাতে পারে সেই ব্যাপারে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
মায়ানমারের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে আরাকান আর্মির তরফে জানানো হয়েছে, রাখাইনের মারাউক-ইউ, মিনবাইয়া, কিয়াকটাও এবং রাথেডং শহরে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মায়ানমারের এক নাগরিক জানিয়েছেন, “রামব্রি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমার বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” রাখাইনে বিপুল সংখ্যক সৈন্য পাঠিয়েছে জুন্টা। সৈন্যদের সঙ্গে দুই মাসেরও বেশি সময় লড়াই করার পর রাখাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.