সুকুমার সরকার, ঢাকা: নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে শনাক্তকৃত ৫ হাজার জনকে প্রথম ধাপে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মায়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতা ও বিদেশ সচিব মিন্ট থোয়ে। বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বাকি রোহিঙ্গাদেরও পর্যায়ক্রমে ফেরত নেওয়ার কথা দেন মায়ানমার বিদেশ সচিব। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব-সহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। মিন্ট থোয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিং করার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাপ করেন। মায়ানমারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বুধবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও তাদের সঙ্গে আলাপ শেষে দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৫ কমিউনিটি হলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় মায়ানমারের বিদেশ সচিব এই আশ্বাস দেন। এ সময় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা বিদেশ সচিব শহিদুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মহম্মদ আবদুল মান্নান, কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মহম্মদ আবুল কালাম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মহম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহম্মদ নিকারুজ্জামান-সহ দুদেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
[নভেম্বরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত]
গত বছরের ২৫ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ১৪ মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো মায়ানমারের একটি উচ্চপর্যায়ের দল কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করল। ক্যাম্পে পৌঁছে মায়ানমার প্রতিনিধিদল সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে কুতুপালং ডি-৫ ব্লকের একটি কমিউনিটি সেন্টারে শতাধিক নির্যাতিত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাপ করেন এবং তাদের বিভিন্ন দাবি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। রাখাইনের বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসেবে রোহিঙ্গারাও বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব-সহ ভিটেবাড়ি ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না করলে তাঁরা মায়ানমারে ফেরত যাবে না। মায়ানমারের বিদেশ সচিব মিন্ট থোয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম (৪৫)। তিনি বলেন, ‘আমরা মায়ানমারের বিদেশসচিব মিন্ট থোয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং রাখাইনে বর্বর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছি। এ সময় আমরা বলেছি, আমরা মায়ানমারের নাগরিক। আমাদের নাগরিকত্বেও স্বীকৃতি দিতে হবে। নিজেদের ভিটেবাড়ি ও জমিজমা ফেরত দিতে হবে। মায়ানমারের যাওয়ার সময় ট্রানজিট ক্যাম্পে তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না। এ কথা শোনার পর আমার প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি তারা।’
[খালেদা মামলায় উত্তপ্ত বাংলাদেশ, সুপ্রিম কোর্টে হাতাহাতি আইনজীবীদের]
রোহিঙ্গা নেতা মহিবউল্লাহ বলেন, ‘আমরা মায়ানমারের বিদেশ সচিবকে বলেছি আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে আকিয়াব শহরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত নিয়ে যান এবং রাখাইনে স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ করে দিন। এতে করে বাংলাদেশের রোহিঙ্গারা এমনিতে চলে যাবে।’ রোহিঙ্গা নেতা হামিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদেরকে রাখাইনে আন্তর্জাতিক কোনও বাহিনীর নিরাপত্তায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মায়ানমারের সংসদে সেদেশের ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো আমাদের মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.