সুকুমার সরকার, ঢাকা: ‘ওয়াটার থিওরি’ অনুসরণ করেই কলকাতায় খুন করা হয়েছে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে। আর তাঁর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ১০০ শতাংশ সাফল্য এসেছে বলে ঢাকা ফিরে মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন আর রশিদ। তিনি বলেন, ”আনার হত্যার ঘটনায় ডিবির ভারত সফর শতভাগ সফল হয়েছে।” ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে চারদিন তদন্ত শেষে কলকাতা থেকে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন আর রশিদ ও তাঁর টিম। গোয়েন্দা প্রধানের কথায়, ”হত্যাকাণ্ডের যৌথ তদন্ত সফল হয়েছে। আনার হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আক্তারুজ্জামান শাহিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের খণ্ডাংশগুলো আনারের বলে মনে করা হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে ঢাকার (Dhaka) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন গোয়েন্দা প্রধান। বাংলাদেশের (Bangladesh) সাংসদ আনোয়ারুল আজিম হত্যার অন্যতম আসামি ফাইজুল ওরফে সিয়াম নেপালে আত্মগোপন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ”তাঁকে শিগগিরই গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন যুক্তরাষ্ট্রে (USA) আছে। তাকে ধরতে ভারত সরকারের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। আনোয়ারুলকে গত ১৩ মে কলকাতার মাটিতে হত্যা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতায়ও একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার রয়েছে। মূল ঘাতক হলো আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। হত্যার পরিকল্পনা হয়েছে বাংলাদেশে আর সংঘটিত হয়েছে কলকাতায়।”
তিনি বলেন, মামলায় ভুক্তভোগীর মরদেহ বা মরদেহের অংশবিশেষ না পাওয়া গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, ভিসেরা ও মেডিক্যাল রিপোর্ট দিতে বেগ পেতে হয়। গোয়েন্দা প্রধানের কথায়, ”এগুলি না পাওয়া গেলে মামলাটি নিষ্পত্তি করাও অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমরা সেখানে গিয়ে আমাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের তথ্য ক্রসচেক করেছি। এছাড়া কলকাতায় গ্রেপ্তার আসামির তথ্য যাচাই-বাছাই করেছি। কলকাতা সিআইডি-কে (CID) সঙ্গে নিয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মেলানোর চেষ্টা করেছি। সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাঙ্ক ভেঙে সেখান থেকে এমপি আনারের মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতীয় পুলিশ ফরেনসিক এবং ডিএনএ পরীক্ষা (DNA test) করে এ বিষয়ে জানাবে।” তদন্তের স্বার্থে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যে কোনও সময় কলকাতায় যেতে প্রস্তুত সাংসদকন্যা ডরিন। কলকাতা যাবার জন্য সম্ভবত তিনি ভিসাও (Visa) পেয়ে গেছেন।
হারুন জানান, ঢাকায় গ্রেপ্তার মূল ঘাতকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। দুই ঘাতকের কথায় শতভাগ মিল পাওয়া গেছে। এমপি আনার যে বাসায় ছিলেন, সেই গোপালবাবুর সঙ্গেও কথা বলেছেন। আনোয়ারুল হত্যার অন্যতম দুই আসামি ফয়জুল ওরফে সিয়াম ও আখতারুজ্জামান শাহিন পলাতক রয়েছে। সিয়াম নেপালে ও শাহিন পালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের ধরতে নেপাল (Nepal) ও ভারত সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। হারুন বলেন, ‘‘আমাদের কাজ ছিল আসামিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য কলকাতা পুলিশকে শেয়ার করা এবং তাদের কাজে সহযোগিতা করা। আমরা মনে করি, তাদের সহযোগিতা করতে পেরেছি।” ডিবি প্রধান জানান, ‘‘কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যে হৃদ্যতা, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে কোন অপরাধী বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে কলকাতাকে স্বর্গীয় আশ্রয় বলে মনে করলে, সেটা আর সম্ভব হবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.