সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের (Bangladesh) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসাদী কার্যকলাপ প্রতিরোধ ও মাদক পাচারের বিরোধিতায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিল হাসিনা সরকার। রবিবার ঢাকার (Dhaka) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সম্মেলনে একথা জানান সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই সঙ্গে মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে যে মাছ ধরার ট্রলারগুলির নামবে, তাদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনও উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, ”রোহিঙ্গারা (Rohingya) দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করার কারণে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়েছি। বারবার চেষ্টা করার পরও তাদের দেশে ফেরাতে পারিনি। এরপর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মাঝেমধ্যেই আমরা রক্তপাত দেখছি, সন্ত্রাস দেখছি। মায়ানমার থেকে মাদকের আনাগোনাও চলছে। এর জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য আমরা তথ্যভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অভিযানে পুলিশ, RAB, বিজিবি, আনসার তো আছেই, প্রয়োজনে আমাদের সেনা সদস্যরাও এতে অংশ নেবেন।”
এর আগে বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন রাষ্ট্রসংঘ দূতকে জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের বংলাদেশে সুদীর্ঘ উপস্থিতির ফলে মৌলবাদী ভাবধারা ও অপরাধ ছড়াতে পারে। আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই রাষ্ট্রসংঘ দ্রুত রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করুক। ২০১৭ সালে মায়ানমারের (Myanmar) রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এবার জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই শরণার্থীরা। দ্রুত এদের দেশে ফেরত না পাঠালে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ আরও ছড়িয়ে পড়বে বলেই আগেও আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতার নিরিখে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যৌথভাবে ক্যাম্পের ভিতরে এবং বাইরে টহল ও অভিযান পরিচালনা করবে।
মায়ানমারে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগে নাম উঠে আসছে পাকিস্তানের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই (ISI)এর নাম। মায়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি তথা আরসা-কে মদত দিচ্ছে তারা। আর সেই প্রভাব এসে পড়ছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে এগারো লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গার বাস। তবে সমুদ্রঘেঁষা কক্সবাজারের উপর থেকে রোহিঙ্গাদের চাপ সামলাতে সরকার এক লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য নোয়াখালির ভাসানচরে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, নাফ নদী মাদক (Drugs) আনা নেওয়ার রুট, সেখানে মাছ ধরার ট্রলারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে মাদক চোরাচালান বন্ধে অভিযান যেটা ছিল তা আরও জোরদার করা হবে। মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে ও বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, RAB, আনসার, পুলিশ, এপিবিএন- যৌথভাবে ক্যাম্পের ভিতরে ও বাইরে অভিযান চালাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.