সাংবাদিক বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
সুকুমার সরকার, ঢাকা: ৪৯ বছরে এসে স্বাধীনতা বিরোধী ও পাকিস্তানের সহযোগী রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রক। রবিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে এই তালিকা প্রকাশ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকাও প্রকাশ করেন তিনি।
এপ্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি নয়। পর্যায়ক্রমে ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে। দেশের স্বাধীনতার বিরোধী রাজাকারদের নাম, পরিচয় ও ভূমিকা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্যই এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য রাজাকারদের নামও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা দিতে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সর্বপ্রথম খুলনার খান জাহান আলি রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থী কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরে দেশের অন্য অংশেও তৈরি হয় এই বাহিনী। প্রথম পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন। একাত্তরের ১ জুন পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করে। তবে এর নেতৃত্ব ছিল পাকিস্থানপন্থী স্থানীয় নেতাদের হাতে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশবলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়। এর সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০ হাজার। এছাড়াও পাকিস্তান সরকার বাঙালি নিধনের জন্য একইভাবে আলবদর এবং আলশামস বাহিনী গঠন করে। তখন বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারদের রাজাকার বাহিনীতে লোক সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। জামাতে ইসলামি, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লিগ, জামাতে ওলামা-সহ পাকিস্তানের সমর্থক অনেক দলের নেতা-কর্মীরা রাজাকার-সহ অন্য বাহিনীতে যোগ দেয়। যদিও সেসময় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বাহিনীগুলিকে সাধারণ অর্থে রাজাকার হিসেবেই ডাকা হত।
স্বাধীনতার পর থেকেই এই বাহিনীগুলির তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের দাবি ওঠে। অবশেষে স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এসে সেই দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারিভাবে কিছুটা হলেও অগ্রসর হয়েছে। তবে এই তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রকাশিত তালিকায় পাকিস্তান সরকারের বেতনভোগী ৩৯৯ জনের নামও থাকছে। মোজাম্মেল হক আরও জানান, ওয়েবসাইটে তালিকাটি প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে শুধু রাজাকারদের নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করা হচ্ছে। তারা কে কোন পেশায় রয়েছে তার বর্তমান তথ্য সরকারের কাছে নেই। তবে তা সংগ্রহ করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.