বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী
সুকুমার সরকার, ঢাকা : ‘বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র দেওয়ার পর সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানে তাঁর নতুন বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নবনিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী (Vikram Kumar Doraiswami)।
সেখানে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে সমস্ত অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা হবে। বাংলাদেশের ভাই-বোনদের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এটা আপনাদের সঙ্গে আমার পরিচিত হওয়ার এবং আপনাদের বন্ধুত্ব ও সমর্থন প্রার্থনার করা সুযোগ। তাই আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমাদের বন্ধুত্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের অনেক উপরে। কারণ এই বন্ধুত্ব লেখা হয়েছে অভিন্ন ত্যাগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি এবং আত্মীয়তার অনন্য সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। আমি একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই ষে, বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয় এবং এটা কোনওদিনই কমবে না। আসলে আমাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধার উপর ভর করে। ঐতিহাসিক জনযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে একটি জাতিকে যেভাবে রূপ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য বাংলাদেশের মানুষের চেতনার প্রশংসা করি। তাকে সম্মান জানাই। আপনারা অসংখ্য মৃত্যু ও মা-বোনেদের প্রতি বর্বর নির্যাতন উপেক্ষা করেই অনন্য সাহস এবং বীরত্বের সঙ্গে অকথ্য অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণা। এই মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের সাহায্য করার সুযোগ, আমাদের কাছে সবসময়ই সম্মানের বিষয় হয়ে থাকবে। আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও আপনাদের সাহসকে সম্মান করে ভারত। সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতির জন্যও বাংলাদেশ আজ সমানভাবে সম্মানিত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে যে গতিতে আপনারা অর্থনৈতিক উন্নতি করছেন আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে আমরা আপনাদের বিশ্বখ্যাত আন্তরিকতা এবং আতিথেয়তার প্রশংসা করি। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সাফল্য বা ক্রিকেট পিচে টাইগারদের অপ্রতিরোধ্য মনোবল। সব ক্ষেত্রেই সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুন চোখে দেখছে।’
বাংলাদেশকে প্রতিবেশী হিসেবে পেয়ে নয়াদিল্লি অত্যন্ত খুশি বলে উল্লেখ করে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত (Indian High Commissioner to Bangladesh) আরও বলেন, ‘আপনাদের নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে পেয়ে আমরা আনন্দিত। মুজিববর্ষ ও আপনাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমি মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ইতিমধ্যে আমি আখাউড়া স্থল সীমান্ত থেকে সরাসরি ধানমন্ডি গিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর দেখেছি। তাঁর উজ্জল নেতৃত্বের প্রতি আমার বিনীত ও আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। আগামীকালও সাভারে যাচ্ছি বাংলাদেশের সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।’
এরপরই তাঁর বাংলাদেশে আসার কারণের দিকে ইঙ্গিত করে দোরাইস্বামী বলেন, ‘নিকটতম সম্পর্কেরও পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আমার সরকার আমাকে ঠিক তাই করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা দু’দেশের সম্পর্ককে সর্বস্তরে প্রসারিত করার কোনও সুযোগ ছাড়ব না। বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। এই কারণেই কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে আমাদের বিদেশসচিব বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সফর স্থগিত পরেও বাংলাদেশকে তাঁর প্রথম সফরের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমরা যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধও হয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি দু’দেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করার জন্য আপনাদের সরকারের সহায়তায় আমরা একটি বিশেষ “এয়ার বাবল” ব্যবস্থা চালু করব। এইভাবে আগামিদিনেও আমরা এমনভাবে কাজ করব যাতে আপনারা স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যা আপনাদের অগ্রাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত করে এবং এই বন্ধুত্বের প্রতি আমাদের মূল্যবোধকে প্রকাশ করে। আমি নিশ্চিত, আমরা যতই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের নেতারা আমাদের সম্পর্কের জন্য তাঁদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেবেন। আমাদের এই প্রচেষ্টায় সবসময় সংবাদমাধ্যমের বন্ধুদের সহায়তা কামনা করি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির প্রত্যাশা পূরণে আমি এবং আমার সহকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা বন্ধু, অংশীদার এবং প্রতিবেশী হিসেবে সর্বদা আপনাদের সঙ্গে থাকব।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.