সুকুমার সরকার, ঢাকা: আপাত দৃষ্টিতে কোনও কাজে লাগে না। জলের প্রাণী। খুব বেশি হলে জলের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু এর বাইরেও জেলিফিশ নামক সামুদ্রিক প্রাণীও অর্থকরী হয়ে উঠতে পারে, তা প্রমাণ করতে চাইছেন বাংলাদেশের (Bangladesh) বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশের সমুদ্রে যে ধরনের জেলিফিশ (Jellyfish) পাওয়া যায়, তা এবার থেকে রপ্তানিযোগ্য করে বাণিজ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা চলছে।
বাংলাদেশের সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে গবেষণা করা একদল বিজ্ঞানীর দাবি, রপ্তানি (Export) আয়ের একটি নতুন উৎস হয়ে উঠতে পারে এই জেলিফিশ। বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের মতো বাংলাদেশের উপকূলেও প্রচুর পরিমাণে জেলিফিশ পাওয়া যায়। এই প্রাণীর মস্তিষ্ক ৯০ শতাংশই জল দিয়ে তৈরি। রক্ত বা হাড় বলে কিছু নেই। মনে করা হচ্ছে, ডাইনোসরদের (Dinosaur) আগেও এই প্রাণীর জন্ম হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের (Department of Fisheries) অধ্যাপক মহম্মদ রাশেদ-ঊন-নবী জানিয়েছেন, ”জেলিফিশ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই গবেষণা করছে। আমরাও গবেষণা শুরু করেছি। তাতে দেখা গেছে, এটির বাণিজ্যিক বেশ কিছু সম্ভাবনা রয়েছে।”
মাস ছয় আগে পটুয়াখালির সৈকতে এবং আগস্টে কক্সবাজার (Cox’s Bazar) সৈকতে জেলিফিশের একটি আধিক্য দেখা গিয়েছিল। সেই সময় জেলিফিশে ভরে যাওয়ায় অনেক জেলে তাদের জাল কেটে ফেলতে বাধ্য হন। কিন্তু জেলিফিশের উপযোগিতাও রয়েছে। নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা তার বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ”বাংলাদেশের সমুদ্রে যেসব জেলিফিশ পাওয়া যায়, তাকে আমরা তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে পারি। একটি খাওয়ার উপযোগী জেলিফিশ। আমাদের এখানে এটা খাওয়া হয় না। কিন্তু তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড বা চিনে খাদ্য হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা হলে সেখানে রপ্তানি করা সম্ভব।”
এসব জেলিফিশ ওষুধ (Medicines)এবং কসমেটিকস শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে বলছেন বিজ্ঞানীরা। এসব জেলিফিশ একেকটা আট থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। জেলিফিশের আরেকটি ধরন রয়েছে, যা বিষাক্ত। এসব জেলিফিশের সংস্পর্শে এলে স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করে। তাতে ক্রমশ বিকল হয়ে যায়। তবে সব জেলিফিশ বিষাক্ত হয় না। বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধরনের জেলিফিশ নিয়ে জেলেদের সচেতন করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। আর তৃতীয় যে ধরনের জেলিফিশ আছে, সেটি খুব ছোট আকারের। কিন্তু এসব জেলিফিশ তেমন কোনও কাজে লাগে না, বিশ্বের অনেক দেশে অ্যাকোরিয়ামে শোভা পায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.