সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় তার জন্য ঢাকাকে (Dhaka) চাপে রাখছে ওয়াশিংটন (Washington)। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যারা বাধা দেবে, তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভিসা (Visa) নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন স্পষ্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ মাথা ঘামাচ্ছে না। শনিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ”যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক দেশ, তেমনি আমরাও। বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের উপর ক্ষমতা প্রভাব খাটাতে পারে। কিন্তু আমরা এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। কারণ আমরা জানি কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হয়।”
ভোটমুখী বাংলাদেশের (Bangladesh) জন্য নতুন ভিসা নীতি আগেই ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকা। সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারীদের ‘সাজা’ দিতেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) স্পষ্ট জানিয়েছেন, এনিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে ফের ভিসা নীতি চালু করার কথা জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোদ নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘে (UN) বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ”আমেরিকা কি ২০০১ সালের অবৈধ নির্বাচনের কথা ভুলে গিয়েছে?”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, হ্যাঁ-না ভোটের উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন নিয়ে এই সচেতনতা তখন তাদের (আমেরিকা) কোথায় ছিল? নির্বাচন বানচালের চেষ্টা দেশের বাইরে থেকে যেন না হয়। এটি হলে কিন্তু বাংলাদেশের জনগণই তাদের ‘স্যাংশন’ (যারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে) দিয়ে দেবে।” হাসিনার কথায়, “জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর হোক তা আমরাও চাই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়েছে।”
‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত’ কিছু ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন বিদেশ দপ্তর। মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। এই ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাদের নিকটবর্তী পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। তবে ‘আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে’ ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনি মার্কিন বিদেশ দপ্তর। প্রায় চার মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন (Antony Blinken) বাংলাদেশে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই সময়ও বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। আবদুল মোমেন (Abdul Momen)বলেছিলেন, তাঁর দল আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীরা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চিন্তিত নয়। কারণ তাদের বেশিরভাগ উন্নয়নশীল এই দেশেই থাকতে চায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.