রবিবার রাতে ভারত থেকে বাংলাদেশে ১ হাজার ৬৫০ টন পিঁয়াজ এসেছে।
সুকুমার সরকার, ঢাকা: দেশজুড়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু তাদের সেই আন্দোলন তুড়ি মেরে গতকাল অর্থাৎ রবিবার রাতে ভারত থেকেই বাংলাদেশে ১ হাজার ৬৫০ টন পিঁয়াজ এসেছে। এছাড়াও ৩৩২ মেট্রিক টন আলুও আমদানি করা হয়েছে। গত কয়েকমাস ধরেই বাংলাদেশে আলু-পিঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া। ফলে বাজারে হাত পুড়ছে সাধারণ মানুষের। এদিকে আর মাত্র ১০ দিন পরেই ইদ। তাই দেশবাসীকে স্বস্তি দিতে ভারত থেকে দ্রুত আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসিনা সরকার। ভারতীয় জিনিস ব্যবহারে আপত্তি জানালেও আলু-পিঁয়াজ আমদানি নিয়ে কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেনি বিএনপি (BNP)।
রবিবার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রকের একটি সম্মেলন হয়।‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাস্কফোর্স’সভা শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের পড়শি দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বলেন। এদিন তিনি জানান, “পরে এই পিঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করা হবে।” বাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই পিঁয়াজ খোলা বাজারে বিক্রি করা শুরু হলে আমার বিশ্বাস অন্তত ৩০ জেলায় পিঁয়াজের দাম কমে যাবে।” বাকি পিঁয়াজ কবে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেগুলো এলসি করলে তারা (ভারত) দেবে।”
বিভিন্ন পণ্যের তুলনামূলক দাম উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, “অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাম অনেক কমে গিয়েছে। তাছাড়া সব পণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। তাই আগামীতেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।” প্রসঙ্গত, ভারত থেকে মোট ৫০ হাজার টন পিঁয়াজ আমদানির কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেই পিঁয়াজ আনবে সরকার। এদিকে ভারত থেকে একদিন আগেই দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৩৩২ মেট্রিক টন আলু এসেছে দেশে। আলুর বাজার স্বাভাবিক রাখতেই আমদানি বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।
শনিবার (৩০ মার্চ) ভারতের ১৩টি ট্রাকে ৩৩২ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়। রবিবার হিলি বন্দরে আমদানিকৃত আলু প্রতি কেজি ৩১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এর আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে। আমদানিকারক মেসার্স মনোয়ার চৌধুরীর প্রতিনিধি রুবেল হোসেন জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এর পর আমদানিকারকরা ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্দর দিয়ে আলু আমদানি করেন। কিন্তু আলু আমদানিতে লোকসান দেখা দেওয়ায় এক মাস আমদানি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। তাঁর কথায়, এক মাস পর আলুর চাহিদা ও দাম বাড়ায় ৯ মার্চ থেকে আমদানিকারকরা ফের আলু আমদানি শুরু করেন। এর পর থেকে প্রতিদিনই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে শনিবার সবচেয়ে বেশি আলু আমদানি হয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি ভারতীয় পণ্য বর্জনের সমর্থনে বক্তব্য দেন। তিনি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, “আওয়ামি লিগ ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে। এটা বুঝতে পেরে বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ভারতীয় পণ্য বর্জনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। দেশের জনগণের নয়, ভারতের সমর্থনে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় টিকে আছে। তাদের ক্ষমতায় থাকতে তলেতলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নয়, আওয়ামি লিগের পক্ষে। ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা, গুম খুন ও অবিচারের জন্য ভারত দায়ী বলে জনগণ মনে করে। জনগণ তাঁদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জন করে।” বিএনপির সঙ্গে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে আরও প্রায় ৬২টি দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.