সুকুমার সরকার, ঢাকা: ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক জগতের চাপের মুখে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তর বাড়ি সংরক্ষণে উদ্যোগী হল বাংলাদেশ (Bangladesh)। ত্রিপুরার আগরতলা সংলগ্ন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই বিপ্লবীর শতবর্ষ প্রাচীন বাড়ি রয়েছে। তা পুরাকীর্তি হিসেবে সংক্ষরণের উদ্যোগ নিয়েছে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)সরকার। এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ শাখার মহাপরিচালক চন্দর কুমার দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছেন।
এর আগে ৭ ডিসেম্বর জেলাশাসক নিজে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে একটি চিঠি পাঠান। তাতে লেখা ছিল, সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জীবন ও কর্মের সাক্ষী হিসেবে তাঁর বসতভিটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী সংরক্ষণ করা যায়, এমন প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। কোনও পুরাকীর্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসনের নির্ধারিত ছকে সুস্পষ্ট মতামত এবং ভূমি তফসিল থাকা প্রয়োজন। ওই বসতভিটা সংরক্ষিত ঘোষণার গেজেট জারি হওয়ার পর প্রাপ্ত বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামী (Freedom Fighter)তথা বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মভিটে রক্ষায় আগেই মাঠে নেমেছিলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। ঐতিহ্যবাহী ওই বাড়িকে পিছনে ফেলে সামনে নতুন ভবন উঠতে থাকায় এই বাড়ির সৌন্দর্য বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় করেছিলেন সংস্কৃতি কর্মীরা। বাড়িটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সম্প্রতি তারা একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা শাখা এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া সাহিত্য অ্যাকাডেমির (Sahitya Academy) যৌথ উদ্যোগে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ওই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন, উদীচীর জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন-সহ একাধিক ব্যক্তি।
উদীচীর জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন বলেন, ”উল্লাসকর দত্তের বাড়ি মানে এটা ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। একজন বিপ্লবী মানুষের পাশাপাশি বাড়িটি শত বছরের ঐতিহ্য। সরকার ইচ্ছা করলে এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার আওতায় নিয়ে এসে সংরক্ষণ করতে পারে। আমরা চাই উল্লাসকরের স্মৃতি সংরক্ষিত হোক। আমরা এ বিষয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
বক্তারা ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের আপসহীন বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়ি আড়াল করে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করার এবং সেখান থেকে নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, ভারতে উল্লাসকর দত্তের নামে রাস্তাসহ অনেক কিছুর নামকরণ থাকলেও দেশে তার জন্মভিটার স্মৃতি মুছে ফেলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ না থাকা উদ্বেগের। অগ্নিযুগের এই অগ্নিপুরুষের আত্মত্যাগের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তার জরাজীর্ণ বাড়ির স্মৃতি সংরক্ষণ জরুরি বলে মনে করেন জেলার সংস্কৃতিসেবীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.