সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনার মাঝেও মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভোট বাংলাদেশে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও। বিএনপি-জামাত শিবিরের প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও টানা চতুর্থবার বাংলাদেশের মসনদে বসতে চলেছেন শেখ হাসিনা। জনগণের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। কত ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেললেন আওয়ামি লিগ সভাপতি?
জানা গিয়েছে, এই নির্বাচনে হাসিনার প্রাপ্ত ভোট গত ছবারের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়া) আসন থেকে ভোটে লড়েছেন মুজিবকন্যা। এই গোপালগঞ্জ হাসিনার জন্মস্থান। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এই আসনে তাঁর ভোটের ব্যবধান ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৬২। হাসিনার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এনপিপির শেখ আবুল কালাম (আম চিহ্ন) পেয়েছেন ৪৬০ ভোট। আরেক প্রার্থী জাকের পার্টির মাহাবুর মোল্লা (গোলাপ ফুল চিহ্ন) পেয়েছেন ৪২৫ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৯০ হাজার ৩০০ জন। ফলে এই আসন থেকে রেকর্ড হারে জনতার সমর্থন পেয়েছেন হাসিনা। আগামী ৫ বছরের জন্য ফের বাংলাদেশের ক্ষমতার রাশ নিজের হাতেই রাখতে চলেছেন তিনি।
গত কয়েকমাস ধরে এই নির্বাচন রুখতে দেশে ‘আগুন সন্ত্রাস’ চালিয়েছে বিএনপি- জামাত-সহ মৌলবাদী দলগুলো। কিন্তু বিরোধীদের কোনও প্রয়াসই সফল হয়নি। উলটে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়নে অস্বস্তি বেড়েছে ভোট বর্জনকারী বিএনপির। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাষ্ট্রসংঘ-সহ পশ্চিমাদেশের অভিযোগও ধোপে টেকেনি। স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে জানিয়ে দেন তিন বিদেশি পর্যবেক্ষক। রবিবারের ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে ডেপুটি হেড অফ মিশন ইউএস এসটিও টেরি এল. ইসলে বলেন, “ভোটের পরিবেশ ভালো। মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে। সবকিছু ভালো মনে হয়েছে। আর সেই অর্থে আমরা যে কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি, সেগুলোতে কোনও অনিয়ম চোখে পড়েনি।”
উল্লেখ্য, নির্বাচনে কারচুপি ও হিংসার অভিযোগে বিদ্ধ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকার। বিরোধীদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে লাগাতার। হাসিনা সরকারের উপর আর আস্থা নেই জানিয়ে এই সরকার ভেঙে তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু তা না হওয়ায় এইবারের ভোট বয়কট করে দেয় খালেদা জিয়ার দল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ বলেও তোপ দাগে বিএনপি। এই লক্ষ্যে গত কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ-অবরোধ জারি রেখেছে বিএনপি-জামাত-সহ সমমনা দলগুলো। ঘটেছে প্রাণহানি।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল রাষ্ট্রসংঘ। এই নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের রক্তচক্ষুর নজরে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু রবিবার বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রাক্তন সদস্য জিম বেটসের। তিনি বলেন, ‘‘আমি যেটি দেখেছি, সেটি হচ্ছে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠ হয়েছে। বাংলাদেশে ভোট গ্রহণের সময় পৃথিবীতে সবচেয়ে কম। পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে আট ঘণ্টা ভোট হয় না।’’ ফলে এই নির্বাচন নিয়ে সমস্ত কটাক্ষ, বিরোধিতা দূরে সরিয়ে দরাজ সার্টিফিকেট পেলেন হাসিনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.