সুকুমার সরকার, ঢাকা: অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন নিউজিল্যান্ডে সফররত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের কাছেই যে মসজিদে দুপুরে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তাঁরা, সেই মসজিদেই সন্ত্রাসী হামলা হয়। একাধিক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নুর মসজিদ-সহ দুটি মসজিদে। এই হামলায় দুই বাংলাদেশি-সহ এখনও পর্যন্ত মোট ৪৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার এম সুফিউর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার জেরে বাতিল করা হয়েছে শনিবার থেকে হ্যাগলি ওভালে শুরু হতে যাওয়া ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কিছু না জানালেও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি) এরই মধ্যে টুইট করে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, হামলার পরেই বাংলাদেশ দলের ওপেনার তামিম ইকবাল টুইট করেন, “বন্দুকধারীদের গুলি থেকে বেঁচে গিয়েছে গোটা দল। ভীতিকর অভিজ্ঞতা, আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন।” মুশফিকুর রহিমের টুইট, “ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গুলি থেকে আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়েছেন…আমরা ভীষণ ভাগ্যবান…আর কখনও এমন কিছু দেখতে চাই না। আমাদের জন্য দোয়া করুন।” ওই ঘটনাকে ‘ভীতিকর অভিজ্ঞতা’ বলেও বর্ণনা করেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য তামিম ইকবাল।
আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টা নাগাদ মসজিদে নমাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন বন্দুকধারী প্রার্থনারত মুসলিমদের ওপর গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বাস তখন মসজিদের সামনে। ক্রিকেটাররা বাস থেকে নেমে মসজিদে ঢুকবেন, এমন সময় রক্তাক্ত অবস্থায় এক মহিলা ভিতর থেকে টলোমলো পায়ে বেরিয়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। ক্রিকেটাররা তখনও বুঝতে পারেননি ঘটনা কী। তাঁরা হয়তো মসজিদে ঢুকেই যেতেন, যদি না বাসের পাশে থাকা একটা গাড়ি থেকে এক ভদ্রমহিলা তাঁদের বলতেন, “ভিতরে গোলাগুলি চলছে। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছে। তোমরা ভিতরে ঢুকো না।” এই কথা শুনেই বাসে উঠে যান ক্রিকেটাররা। তারপর সেখানে আটকে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। কারণ পুলিশ ততক্ষণে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাসে বসেই তাঁরা দেখতে পান, মসজিদের সামনে অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। অনেকে রক্তাক্ত হয়ে বেরিয়ে আসছেন মসজিদ থেকে। যা দেখে আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। কারণ বাসে কোনও নিরাপত্তাকর্মী দূরে থাক, স্থানীয় লিয়াজোঁ অফিসারও ছিলেন না। রাস্তায় তখন অনেক পুলিশ। সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলেছে পুলিশের গাড়ি।
[চলতি মাসেই চালু হচ্ছে ঢাকা-কলকাতা নৌযান পরিষেবা]
অনেকক্ষণ বাসে বসে থাকার পর ক্রিকেটাররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস থেকে নেমে মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সবার চোখে-মুখে তখন আতঙ্ক। কারণ দূরত্বটা একেবারে কম নয়। সেটি কমাতে রাস্তা ছেড়ে সবাই নেমে পড়েন হ্যাগলি পার্কে। পার্কের মধ্যে দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে সবাই মাঠে ফেরেন। তারপর ড্রেসিংরুমে ঢুকে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্রিকেটাররা বলছিলেন, তৃতীয় টেস্টের আগের দিনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সংবাদ বৈঠক একটু দেরিতে শেষ না হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত। কারণ, বাংলাদেশ দলের মসজিদে ঢোকার কথা ছিল দুপুর দেড়টায়। কিন্তু, তা শেষ করে যেতে যেতে ১টা ৪০ বেজে যায়। বাংলাদেশ দলের বাস আর পাঁচ মিনিট আগে মসজিদে পৌঁছে গেলে ক্রিকেটাররা সন্ত্রাসী হামলার সময় মসজিদের ভিতরেই থাকতেন। তাহলে কী হতে পারত ? আর যা দেখেছেন, তা ভাবতে গিয়ে মুশফিকুর রহিম হাঁটতে হাঁটতেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। তামিম ইকবাল বলতে থাকেন, “যা দেখেছি, এরপর আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। এই টেস্ট খেলার প্রশ্নই আসে না। আমি দেশে ফিরে যাব।”
[দিল্লির মসনদে বসছে কে? অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ওপার বাংলা]
বাসে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিলেন ম্যানেজার খালেদ মাসুদ ও বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন আইয়ারও। কোচিং স্টাফরা ছিলেন মাঠে। নমাজ শেষে মাঠে ফেরার পর বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে নামার কথা ছিল। কিন্তু, পরিস্থিতির জেরে তা স্থগিত রাখা হয়। সবাই ড্রেসিংরুমে ফেরার পর খোঁজ পড়ে বাংলাদেশ দলের দুই ক্রিকেটার লিটন কুমার দাস ও নইম হাসানের। তাঁরা দুজন ছিলেন হোটেলে। ফোনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিন্ত হন ম্যানেজার খালেদ মাসুদ। হ্যাগলি ওভালের ড্রেসিংরুমে ঘণ্টা দুয়েক অবরুদ্ধ থাকার পর বাংলাদেশ দলকে বিশেষ এসকর্টে করে নভোটেল হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো ক্রাইস্টচার্চ শহরই তখন অবরুদ্ধ। বাংলাদেশ দল হ্যাগলি ওভালে ফিরে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের একাধিক জায়গায় সন্ত্রাসী হামলার খবর আসতে থাকে। বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও।
ক্রাইস্টচার্চ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মসজিদে হামলাকারী একজন চরমপন্থী অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। বিষয়টি জানতে পারার পর সিডনি থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও বলেন, “ওই আততায়ী দক্ষিণপন্থায় বিশ্বাসী একজন হিংস্র জঙ্গি।”
Alhamdulillah Allah save us today while shooting in Christchurch in the mosque…we r extremely lucky…never want to see this things happen again….pray for us
— Mushfiqur Rahim (@mushfiqur15) March 15, 2019
Entire team got saved from active shooters!!! Frightening experience and please keep us in your prayers #christchurchMosqueAttack
— Tamim Iqbal Khan (@TamimOfficial28) March 15, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.