ফাইল ছবি
সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন? বৃহস্পতিবার এনিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আদালতে। এই মুহূর্তে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারিতে জ্বলছে বাংলাদেশ। দিকে দিকে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ করছেন হিন্দুরা। ইতিমধ্যেই এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রাণ গিয়েছে এক আইনজীবীর। তাঁর মৃত্যুতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে।
গত ২৫ নভেম্বর বিকালে চিন্ময় প্রভুকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ২৬ তারিখ চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হয় তাঁকে। শুনানি শেষে জামিন খারিজ হয় এই হিন্দু সন্ন্যাসীর। চিন্ময়কে আদালতে পেশের আগে থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল আদালত চত্বরে। জামিন খারিজ হতেই গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। প্রিজন ভ্যান আটকে চলতে থাকে বিক্ষোভ। হিন্দুদের বিক্ষোভ থামাতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। উত্তাল এই পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয় চট্টগ্রামে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলামের। এর মাঝেই ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের মতামত জানতে অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামানকে ডেকে পাঠায় আদালত।
শুনানির সময় আসাদুজ্জামান আদালতের কাছে বাংলাদেশে ইসকনের প্রতিষ্ঠার নানা বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এটি একটি ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন। সরকার ইসকন নিয়ে যাচাই শুরু করেছে। এই সংগঠন রেজিস্টার্ড কি না, এটি নিষিদ্ধ হবে কি না, এর বিরুদ্ধে কী কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সরকার সবকিছু দেখবে এবং আদালতে উপস্থাপন করবে।” সব কিছু শোনার পরই বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ইসকনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রিপোর্ট জমা দিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে আর অবনতি না হয় সেনিয়েও সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল এই মামলার শুনানি হবে। পরে আদালত থেকে বেরিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “এ বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।”
জানা গিয়েছে, চট্টগ্রামে আইনজীবী মৃত্যুর ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ দল নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড় ও আন্দরকিল্লা-সহ কয়েকটি জায়গায় অবস্থান করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনূস আইনজীবী হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন এবং তিনি এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেছেন, “গত কয়েক দিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কথা বলতে হবে। কিছু মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন। অথচ গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।” অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “শেখ হাসিনা দেশে নেই, তবে তার প্রেতাত্মারা দেশে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জনগণ বলতে শুরু করেছে দেশের সব ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা ভারতে বসে করছে। সামান্য এক বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামে আমার এক বন্ধুকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আজকে কিছু লোক এ বিষয় নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস করছে।” পড়শি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.