সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভাইয়ের রক্তে রাঙালো একুশে ফেব্রুয়ারিকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন বিশ্ববাসী। আজ, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন হলেও, বরাবরের মতো এবারও আকর্ষণের কেন্দ্রে– দুই বাংলা। বিশেষত ঢাকার শহিদ মিনার চত্বর। শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে, বুধবার রাত ১২টা পেরোতেই রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তারপর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি’ – এই অমর গানের সুরে শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। ভাষা দিবসের শহিদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন সকলে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক এবং প্রশাসনিক প্রধানের পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পুষ্পার্ঘ্য দেন শহিদ বেদীতে। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরের ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়াম লিগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরাও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
[বাংলাদেশে রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ আগুন, মৃত অন্তত ৬৯]
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক পবিত্র, অবিস্মরণীয় দিন। অবিভক্ত পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা চালু করার দাবিতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন চলাকালীন তরুণদের যুবকদের ওপর তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের নির্বিচার গুলিবর্ষণের কথা ভাবলে আজও ক্ষোভ উসকে ওঠে আমবাঙালির হৃদয়ে। আন্দোলন দমন করতে ১৯৫২ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করেন। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান সালাম, রফিক, বরকত, জব্বাররা। প্রাণের ভাষা প্রতিষ্ঠায় তাঁদের এই বলিদান সেদিন তো সফল হয়েছিলই। কালক্রমে সালাম, রফিক, বরকতদের মহান লক্ষ্য আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পায়। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পৃথিবীর যেখানে যত বাঙালি রয়েছেন, সকলে একযোগে আজকের দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করেন। শুধু বাঙালিই নন, অন্যান্য ভাষাভাষির মানুষজনও নিজের মাতৃভাষার প্রতি এদিন বিশেষ শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে থাকেন।
[ব়্যাবের সঙ্গে গুলির লড়াই, নিকেশ ৩ মাদক কারবারি]
ঢাকায় সেদিনের সেই শহিদ যুবকদের স্মরণে প্রতি বছর দেশবাসী শহিদ মিনারের সামনে এসে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। ফুলে ছেয়ে যায় মিনারের বেদি। একুশের সূচনা লগ্নে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এই চত্বরটি চারস্তরীয় কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ৬০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আর ঢাকা শহরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য আরও ১০ হাজার পুলিশকর্মীকে কাজে রাখা হয়েছে। বুধবার সন্ধে ছ’টা থেকেই বেশ কিছু রাস্তাঘাটে যান চলাচল ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চানখাঁরপুল, বকশিবাজার, নীলক্ষেত, পলাশি, শাহবাগ, হাইকোর্ট ক্রসিং, রোমানা চত্বর এলাকা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার ছাড়া কোনও গাড়ি ঢোকায় জারি নিষেধাজ্ঞা। এসব এলাকায় তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। শহিদ মিনারে যাওয়ার প্রতিটি প্রবেশ ফটকে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে রয়েছে। সেখানে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশি ও হ্যান্ডব্যাগ পরীক্ষা করার পর তাঁদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাতভর চলবে অনুষ্ঠান।
এপার বাংলাতেও একই আবেগে চলছে শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান। সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষা দিবসের শহিদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে তাঁদের প্রণাম জানিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রী দুই বাংলার মানুষকে ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছে টুইটারে। রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির মানুষজন নানা আয়োজনে পালন করেছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
২১শে উদ্যান শহীদ স্মারকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ #২ >> https://t.co/7BFthGoHz5
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) February 21, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.