সুকুমার সরকার, ঢাকা: অসমের এনআরসির ফলে বাংলাদেশের উপর চাপ পড়তে পারে আশঙ্কা ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথাও বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুরোধ করেছিলেন, অসম থেকে বিতাড়িত বাংলাভাষীদের যেন বাংলাদেশের দিকে ঠেলে না দেওয়া হয়। তাহলে রোহিঙ্গাদের মতো ওই মানুষগুলির চাপে নাভিশ্বাস উঠবে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের। বিষয়টি নিয়ে নাকি তাঁকে আশ্বস্তও করেছিলেন মোদি। জানিয়েছিলেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর জন্য বাংলাদেশের কোনও সমস্যা হবে না। একই কথা বলেছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরও।
যদিও তারপরও কাটেনি আশঙ্কার মেঘ। শনিবার অসমে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সূর্যাস্ত নেমে এসেছে ১৯ লক্ষের বেশি মানুষের জীবনে। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এই মুহূর্তে দেশহীন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। এদের মধ্যে প্রচুর মানুষ বাংলাভাষায় কথা বলেন। কেউ কেউ বলছেন, অনেকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করে অসমে বসবাস করছিলেন। কিন্তু, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক নয়। তাই তাঁদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বা বিদেশমন্ত্রী যা বলেছিলেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা নিয়ে পর্যালোচনাও করা হতে পারে। আর এতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশহারা ওই মানুষগুলি।
কারণ, কয়েকমাস আগেই শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির। এনআরসি তালিকায় নাম না থাকা মানুষদের বাংলাদেশে পাঠানো না হবে বলেই জানিয়েছিলেন তিনি। তাই বাংলাদেশ কোনওভাবেই দেশহারা ওই মানুষগুলির পাশে দাঁড়াবে না। জায়গা দেবে না থাকতে। ফলে যতই গায়ে বাংলাদেশি তকমাজুড়ে দেওয়া হোক না কেন সেদেশে ঠাঁই হবে না তাঁদের।
শনিবার অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পায়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই তালিকায় যাদের নাম বাদ পড়েছে তাঁরা নতুন করে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন। এরজন্য সবরকম সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার। কিন্তু, তারপরও চিন্তা কাটছে না বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া হাইলাকান্দি, কাছাড় ও করিমগঞ্জের অসংখ্য মানুষের। আগামীতে কী হবে সেই দুশ্চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁদের। পরিস্থিতি দেখে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, ‘রোহিঙ্গাদের থেকেও না বাজে পরিস্থিতি হয় আমাদের। রোহিঙ্গাদের তবুও আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু, আমরা তো সেখানেও যেতে পারব না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.