সুকুমার সরকার, ঢাকা: শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এর মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) উপকূলীয় জেলাগুলি। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসন বৈঠক করছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় জেলা খুলনায় ইতিমধ্যে ৯টি ও উপজেলায় ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝড়ের মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত বছর একই সময় আঘাত হানা সাইক্লোন ‘আমফান’-এর মতো ‘যশ’ বিধ্বংসী হতে পারে এমন আশংকা করে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সিডর, আইলা, আমফানের কথা স্মরণ করে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষ নতুন ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। খুলনার কয়রা উপজেলায় আমফানের ক্ষত এখনও শুকায়নি। এখনও সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের। মাঝেমধ্যে নদীতে সামান্য জোয়ারের জল বাড়লেই অনেক এলাকার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে আবার ঘূর্ণিঝড় আসছে শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষজন। এদিকে, ভোলা জেলার উপকূলের প্রায় তিন লক্ষ ১৮ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। ভোলায় ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ মোকাবিলায় ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য ৭০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে মোট ৫ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং চালিয়ে নদী তীরের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। দুর্যোগ মুহূর্তে মেঘনা উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ২৭৯ মেট্রিক টন চাল, ২৪ লক্ষ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ৯ লক্ষ ও পশুখাদ্যের জন্য ১৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ভারচুয়াল সভায় জেলা পুলিশ সুপার ড. এ এইচ কামরুজ্জামান, সিভিল সার্জন ড. আবদুল গফ্ফার-সহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি-বেসরকারি আধিকারিকরা অংশ নিয়েছেন। মেঘনা নদীর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। এ জেলার সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা ঘিরে আছে মেঘনা নদী। রামগতি ও কমলনগর থেকে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। রামগতির চর আবদুল্লা ইউনিয়ন মেঘনা নদী দ্বারা বেস্টিত। এ ইউনিয়নটি দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত বছরের ২০ মে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলিতে আঘাত হেনেছিল আমফান। বর্তমানে নিম্নচাপ মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ২৬ মে নাগাদ ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। যখন লোকালয়ে আঘাত হানবে, তখন জোয়ারের সময় হলে জলের উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট বাড়তে পারে। এখন ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এদিকে দেশের জলসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেছেন, “ঘূর্ণিঝড় যশ মোকাবিলায় তার মন্ত্রক সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নির্দেশে জলসম্পদ মন্ত্রক ও জল উন্নয়ন বোর্ড ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এই কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য একটা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।” শামীম আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় যশ মোকাবিলায় আগাম সকল প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলাগুলোর সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রস্তুত থাকার জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.