সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের (Bangladesh) দুর্গোৎসবে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর-সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লুটপাট কাণ্ডে কার্যত মুখ পুড়েছে সরকারে ক্ষমতাসীন দলের। যদিও দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে দোষী সন্দেহে অনেককে ধরপাকড় করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনার জেরে তাদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের ধস নামাতে পারে বলে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে আওয়ামি লিগের (Awami Legue) অন্দরে। মন্দিরে হামলা কাণ্ডে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়েও চিন্তিত সরকার ও আওয়ামি লিগের নীতি নির্ধারকরা।
উৎসবের মরশুমে পদ্মাপাড়ে লাগাতার সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Narendra Modi) চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সাধারণভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আওয়ামি লিগের ‘ভোটব্যাংক’ হিসেবে পরিচিত। দলের নেতাদের দাবি, সরকারে আওয়ামি লিগ থাকলে সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ‘নিরাপদ’ থাকে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, ভোলা, কুমিল্লার মুরাদনগর, সুনামগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকায় গত এক যুগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে। আর তাতে সমালোচনার মুখে পড়েছে আওয়ামি লিগ।
এখন বাংলাদেশে দুর্গোৎসবের মাঝে হিন্দু ধর্মীয় স্থানগুলিতে হামলার বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বড় ইস্যু হলে সরকার ও আওয়ামি লিগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছে নেতৃত্ব। হিংসায় উসকানির জন্য বিএনপি, জামাত ও হেফাজতে ইসলামের হাত দেখছেন আওয়ামি লিগের নেতারা। পাশাপাশি, পুজোকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হতে পারে – এটা আগে থেকে আঁচ করতে না পারার বিষয়টি গোয়েন্দা ব্যর্থতা, তাও মেনে নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য না থাকায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টি নিয়েও দলের নেতারা ব্যক্তিগত স্তরে আলোচনা করেছেন। কয়েকটি জেলায় অন্তত ৭৫টি মন্দিরে হামলা ভাঙচুর কাণ্ডে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলেছে।
এই অবস্থায় দ্রুত ঘটনার উৎসমূল খোঁজার চেষ্টায় নেমেছে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা। কুমিল্লার ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অন্যতম কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক (Facebook) বলে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। সরকারি দল আওয়ামি লিগ মনে করছে, যেসব এলাকায় দল
সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, সেসব এলাকায় এমন সব অনাকাঙ্ক্ষিত কাণ্ড ঘটেছে। এদিকে তদন্তের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা মনে করছেন, ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির একজন নেতার ফাঁস হওয়া ফোনালাপকেও গুরুত্ব
দিচ্ছেন।
ওই আলাপে মণ্ডপে কোরআন রাখার প্রসঙ্গ এসেছে। কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে ঢাকার কাঁকরাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ কাণ্ডে দুটি মামলায় চার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকার পল্টন থানার মামলায় খিলাফত আন্দোলনের আমির জাফরুল্লাহ খান-সহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা দুই থেকে আড়াই জনকে আসামি করা হয়েছে। আর রমনা থানায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে, আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ”সাম্প্রদায়িক অপশক্তি পরিকল্পিতভাবে মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এই অপকর্ম করেছে। অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.