সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারতের বলয় থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চিন। বাংলাদেশের পণ্য চিনে রপ্তানিতে ৯৮ শতাংশ শুল্ক ছাড় দিয়েছে বেজিং। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি খতিয়ে সহযোগিতা দিতে তারা মেডিক্যাল টিমও পাঠিয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করলে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেওয়ার কথা জানিয়েছে বেজিং। বাংলাদেশও চিনের টিকার তৃতীয়ধাপ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট দেশটির প্রভাব খবর করতে আসরে নেমেছে তাইওয়ান।
সম্প্রতি, তাইওয়ান এক্সটারনাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল নামে একটি প্রতিষ্ঠান এক লক্ষ সার্জিক্যাল মাস্ক, ১৬০০ এন-৯৫ মাস্ক, ২০ হাজার কাপড়ের মাস্ক, ১০ হাজার ফেস শিল্ড, পিপিই, গগলস, দুই সেট ভেন্টিলেটর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাইওয়ানের আধা-সরকারি অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে তাইওয়ানের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে কাজ করে। এই ঘটনার পরই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চিন। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকে টেলিফোন করে ক্ষোভের কথা জানিয়েছে বেজিং। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিনকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ এক চিন নীতিতে বিশ্বাস করে। এখানে তাইওয়ানের সঙ্গে আলাদা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের কোনও বিষয় নেই। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ আধিকারিক বিবিসিকে বলেছেন, ”চিনের দূতাবাস থেকে মৌখিকভাবে টেলিফোন করে তাদের মনোকষ্টের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, বাংলাদেশ এক চিন নীতিতে বিশ্বাস করে, সেই দৃষ্টিভঙ্গির কোনও পরিবর্তন হয়নি।”
উপহার গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা তিন মন্ত্রীর একজন, বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”তাইওয়ানের কাছ থেকে উপহার সামগ্রী নেয়া হচ্ছে সেটা আমরা জানতাম না। আমাদের বলা হয়েছিল, ওয়ালটন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কিছু উপহার সামগ্রী দেবে। হেলথ মিনিস্ট্রি এটার আয়োজন করেছিল।’ ওখানে গিয়ে আমরা শুনলাম, তাইওয়ান থেকে ওনাদের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। এর বেশি আমাদের জানাও ছিল না, আমরা জানতামও না যে এখানে তাইওয়ানের কোনও ব্যাপার আছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ানের থেকে উপহার নিয়ে বেজিংকে বেকায়দায় ফেলেছে ঢাকা। কারণ বরাবর তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এসেছে চিন। সেই দাবিকে সমর্থনও করেছে বাংলাদেশের মতো অনেক রাষ্ট্র। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে চিনা আগ্রাসনের কথ মাথায় রেখে তাইওয়ান ও বাংলাদেশে উভয় দেশের সঙ্গেই বোঝাপড়া হয়েছে ভারতের। ফলে চিন চাইলেও বাংলাদেশে আপাতত ভারত বিরোধী গতিবিধিতে হওয়া দিতে পারবে না। এছাড়া, তাইওয়ান ও এবার সে দেশে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পরদক্ষে নয়াদিল্লির পক্ষে কূটনৈতিক জয় হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.