সুকুমার সরকার, ঢাকা: প্রায় সাড়ে আটশো বছর আগেকার ইতিহাস চোখের সামনে। সেই রাজবাড়ি, বিরাট দালান, পাশের দিঘি- সবই যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এল। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? তবে পদ্মাপাড়ের ঐতিহাসিক পটভূমি বিক্রমপুর থেকে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী কিন্তু একথাই বলছে। মুনসিগঞ্জের রামপালে মিলল সেন বংশের সম্রাট বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ, মন্দির, দিঘির ধ্বংসাবশেষ। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে উদ্ধার হয়েছে এই প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ।
ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরের সদরের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার ও টঙ্গিবাড়ির নাটেশ্বর বৌদ্ধ নগরী আবিষ্কার হয়েছে আগেই। বজ্রযোগিনী ও রামপাল অঞ্চলে প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ উদ্ধারে ২০১১ সাল থেকে খনন কাজে হাত দেওয়া হয়। বৌদ্ধ ধর্মের সুবিখ্যাত পণ্ডিত, প্রচারক অতীশ দীপংকরের বাস্তুভিটার কাছে ২০১৩ সালে প্রাচীন বৌদ্ধবিহারটি আবিষ্কার হয়। বিহারটি ‘বিক্রমণিপুর বিহার’ নামে পরিচিত। আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহারের পাঁচটি ভিক্ষু কক্ষ দেখা গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৌদ্ধ ধর্মের জ্ঞানতাপস অতীশ দীপংকরের সঙ্গে এই বিহারের সম্পর্ক রয়েছে। আবিষ্কৃত বৌদ্ধ বিহারের নকশা অনুযায়ী, উন্মোচিত ভিক্ষু কক্ষগুলো বিহারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।
সুসম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিয়ে মোদিকে সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা হাসিনার
এত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার হওয়ার পর উৎসাহ বেড়েছে ঐতিহাসিকদের। তাতেই রামপালের বল্লালবাড়িতে পাওয়া গেল সেন আমলের রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। প্রাচীন ইটের গাঁথুনি, মৃৎপাত্র এবং চারকোল-সহ আরও কিছু জিনিস পাওয়া গেছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রত্ননিদর্শনের বয়স বা নির্মাণকাল নির্ধারণ করার জন্য কার্বন-১৪ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এখান থেকে পাওয়া চারকোলের কার্বন পরীক্ষার জন্য আমেরিকান ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানো হবে। তাতেই সহজে বয়স বোঝা সম্ভব। ধারণা করা হচ্ছে, রাজবাড়িটিতে রাজা বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ ও মন্দির রয়েছে। দু’দিনের পরীক্ষামূলক খননেই মাটির নিচে চাপা থাকা আটশো বছরের পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী বেরিয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিক্রমপুরের রামপাল ইউনিয়নের বল্লালবাড়ি এলাকাটি বাংলার সেন রাজাদের রাজধানী ‘বিক্রমপুর’ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সেখানে রাজবাড়ির কোনও চিহ্ন এতদিন দৃশ্যমান ছিল না। কারণ, এর আগে কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হয়নি।
খনন কাজের তত্ত্বাবধানে থাকা জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহ সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের কথায়, ‘বল্লালবাড়িতে খনন কাজে পাওয়া পাথরগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো কোনও স্থাপত্যের ভাঙা টুকরো হতে পারে। বড় আকারের খনন কাজ করলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসতে পারে। খনন কাজ শতভাগ সম্পন্ন হলে পুরো একটি রাজধানীর চিত্র ফুটে উঠতে পারে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.