সুকুমার সরকার, ঢাকা: ফণী, আয়লা ও সিডরের ক্ষতটাকে এবার বাংলাদেশিদের স্মরণ করাল আমফান। মূলত পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে আমফান বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলি-সহ দেশের মধ্যভাগের বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাত হানে। বৃহস্পতিবার ভোর অবধি ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে আজ দুপুরের মধ্যেই।
উপকূল পেরিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে আমফান স্থলভাগের দিকে এগিয়ে যায়। তার আগে পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। রেহাই ছিল না ঢাকাবাসীর। রাতভর ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝড়ো হাওয়া-সহ বৃষ্টি হয়েছে প্রায় সারারাত। ভোরের দিকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এলেও মাঝে মাঝেই দমকা হাওয়া বইছে। বৃহস্পতিবার আকাশ মেঘলা থাকতে পারে।
বাংলাদেশে এই ঘূর্ণিঝড় প্রাণ কেড়েছে ৮ জনের। যশোরের চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়। সাতক্ষীরায় আমগাছের ডাল ভেঙে কহিনুর বেগম (৪০) প্রাণ হারান। বুধবার সন্ধেয় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে তার নিচে চাপা পড়ে রাসেদ নামে ৬ বছরের একটি শিশুর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জনসচেতনতার প্রচার কাজ চালাতে গিয়ে ধানখালির ছৈলাবুনিয়া এলাকার খালে নৌকা ডুবে সিপিপি’র দলনেতা শাহ আলমের মৃত্যু হয়। ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণে গাছ চাপা পড়ে প্রাণ যায় ছিদ্দিক ফকির (৭০) নামে এক বৃদ্ধের। বয়স্ক ভাতা আনার জন্য ভাড়া করা মোটরসাইকেলে উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান শাহজাহান মোল্লা (৬০)।
দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে জোয়ারের জলে ডুবে মহম্মদ সালাউদ্দিন (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক তদন্ত মহম্মদ সোলাইমান জানান, উপকূলে ঘাস কাটতে গিয়ে ওই যুবক জোয়ারের জলে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাঁর দেহ উদ্ধার করেন। পটুয়াখালি জেলার কলাপাড়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ সময় অনেক মাছের ঘের ভেঙে বিপুল পরিমাণ মাছ চলে যায়। আমফানের একটি অংশ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল দিয়ে ঢুকে যশোর ও নড়াইল জেলার দিকে চলে যায়। সেখান থেকে মাগুরা, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ থেকে জামালপুরের দিকে এগোয়। সমুদ্রের গর্জন, উঁচু ঢেউ, জলোচ্ছ্বাস, প্রবল বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া- এমন রুদ্রমূর্তি ধরে স্থলভাগে তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে।
১৯৯৯ সালের পর প্রথমবার তৈরি হল সুপার সাইক্লোন আমফান। ভয়ংকর আমফান তছনছ করেছে গাছপালা, মানুষের ঘরবাড়ি। রাত পর্যন্ত শতাধিক গ্রাম তলিয়ে হাজার হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। পুরো অঞ্চলজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যান টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। অনেক স্থানে ফাটল ধরে বাঁধে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর অন্তত ২৪ লক্ষ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ে। আমফানের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বহাল আছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গত রবিবার লঘুচাপ থেকে তৈরি হয় সুস্পষ্ট লঘুচাপ। সেখান থেকে নিম্নচাপ, তারপর গভীর নিম্নচাপ থেকে সোমবার ঘূর্ণিঝড় আমফান সাগরে অবস্থান করে। এরপর মঙ্গলবার আমফান সুপার সাইক্লোনিক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ছয় মাস আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মতো আবারও বুক চিতিয়ে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবন। সুন্দরবন অতিক্রম করার সময় আমফানের শক্তির অনেক ক্ষয় হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.