সুকুমার সরকার, ঢাকা: পদ্মা সেতু ঘিরে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ। দেশ জুড়ে উচ্ছ্বাসের এই আবহ থাকলেও ফেরি ও লঞ্চ মালিকরা আশঙ্কায় ভুগছেন। আমজনতার জন্য সেতু খুলে যাওয়ায় ওই রুটের যাত্রীবাহী জলযানগুলির কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। আশঙ্কা, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ির মধ্যে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটেও ফেরির সংখ্যা কমানো হবে।
গত শনিবার অর্থাৎ ২৫ জুন প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর (Padma Setu) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। উদ্বোধনী ভাষণে হাসিনা বলেন, ”পদ্মা সেতু আত্মমর্যাদা ও বাঙালির সক্ষমতা প্রমাণের সেতু শুধু নয়, পুরো জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধও।” উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুতে প্রথম টোল দেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মার উপর সেতু নির্মাণ বাংলাদেশে তো বটেই, বিশ্বের প্রযুক্তির ইতিহাসে নিঃসন্দেহে বড় মাইলস্টোন। তবে এনিয়ে ফেরি ও লঞ্চের মালিকরা আশঙ্কায় ভুগছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে খবর, পদ্মা সেতু চালু হলেও আসন্ন পবিত্র ইদ-উল-আজহা পর্যন্ত শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটের ফেরিগুলো চলাচল করবে। ইদের পরে ধীরে ধীরে এসব ফেরি অন্য রুটে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে এখন আটটি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ২১টি ফেরি চলাচল করছে। এ দুই রুটে মোট ফেরি আছে ২৯টি। প্রতিবছর এই দুই রুটে চলাচলকারী ফেরি থেকে ৩৫০ কোটি টাকা আয় হয় বিআইডব্লিউটিসির। পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরি থেকে আয় কমে যাবে। তাই আয় ঠিক রাখতে নতুন নতুন রুট চালু করা হচ্ছে।
নৌপরিবহণ মন্ত্রক বলছে, ১৯টি নতুন ফেরি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে চালু রুটেও ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। প্রস্তাবিত রুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ থেকে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট, মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার নরাদহ, পিরোজপুরের বেকুটিয়া থেকে চরখালী, কক্সবাজার থেকে মহেশখালী, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে হিজলা এবং আমতলী থেকে বরগুনা।
উল্লেখ্য, মোট ৩০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া পদ্মা সেতুর (Padma Bridge) কাজের চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। সেতুটি তৈরি হতে সময় লেগেছে ৯০ মাস ২৭ দিন। দিনরাত খেটে কাজ করেছেন প্রায় ১৪ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার ও বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রায় এক হাজার ২০০ জন দেশি, দুই হাজার ৫০০ জন বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার। শ্রম দিয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ৫০০ দেশি শ্রমিক, আড়াই হাজার বিদেশি শ্রমিক এবং প্রায় ৩০০ দেশি-বিদেশি বিশ্লেষক। অবশেষে শনিবার সব শেষে স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেখলেন বাংলাদেশবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.