সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে (Bangladesh) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েই চলেছে। একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ ও তাদের সমমনস্ক দলগুলি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, প্রাক্তন শাসকদল বিএনপি-র নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোও জোট শক্ত করে জোরালো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এখনই সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তদারকি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) লিগ সরকারের বক্তব্য, সংবিধানে অ-নির্বাচিত তদারকি সরকার বলে কোনও অস্তিত্ব নেই। কাজেই নির্বাচিত সরকারের অধীনেই সবাইকে অংশ নিতে হবে। কিন্তু বিএনপি ও তার সমমনস্ক দলগুলো তদারকি সরকার না পেয়ে ২০১৪ এবং ২০১৯-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে। ক্ষমতায় আসে আওয়ামি লিগ আর বিরোধীদলের আসন গ্রহণ করে জেনারেল এরশাদের প্রাক্তন শাসকদল জাতীয় পার্টি। আওয়ামি লিগের মনোভাব আঁচ করতে পেরে বিএনপি তার জোট নিয়ে সারা দেশে জোরাল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এই অবস্থার মাঝেই কমিশনার (Election Commissioner) আনিছুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেছেন, ‘‘২০২৪ সালের গোড়ার দিকে, একেবারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারিখ ঠিক করিনি।” দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এই প্রশিক্ষণ চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ব্যালটে ভোট হবে জানিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, ”এ কারণে চ্যালেঞ্জটা বেশিই থাকবে। নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আইনে প্রিসাইডিং অফিসারের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া আছে।” নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার বক্তব্য, ”আইনের মধ্যে থাকলেই সুষ্ঠু এবং ঝুঁকিমুক্ত ভোট করা সম্ভব। শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে জাতিকে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচনী আধিকারিকদের কাজ করতে হবে। আরেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব বলেন, ”কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ – এই বাক্য মনে রেখে ভোটের মাঠে আধিকারিকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক জোটগুলোর হিসেবনিকেশও এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটের রাজনীতির সূচনা হয়েছিল ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে। জেনারেল এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামাতে ইসলামির সমর্থন নিয়ে বিএনপি (BNP) আর ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল মি লিগ। কিন্তু জোট রাজনীতির সবচেয়ে বড় প্রভাব দেখা গিয়েছিল ২০০১ সালের নির্বাচনে। সেই বছর জামাতে ইসলামির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে বিপুল আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেই মন্ত্রিসভায় জামাতের নেতারাও স্থান পেয়েছিলেন।
পরবর্তীতে মহাজোট গঠন করে আওয়ামি লিগ। এই ব্যানারে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামি লিগ যে সরকার গঠন করেছিল, তাতে জায়গা পেয়েছিল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং সাম্যবাদী দলের নেতারাও। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়েও শরিক দলগুলোকে নিয়ে মহাজোটের ব্যানারে নির্বাচন করে টানা তিনবার ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামি লিগ। অন্যদিকে, ২০ দলীয় জোটে থাকলেও গণফোরাম-সহ কয়েকটি দল সঙ্গে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জোটবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে ফসল ঘরে তুলতে পারেনি বিএনপি। এখন আবার ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে জোটের রাজনীতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
একদিকে শাসকদল আওয়ামি লিগ এবং তাদের শরিক দলগুলি একসঙ্গে নির্বাচন করা অন্যদিকে একত্রিত হচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাসদ (ইনু), গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, গণ আজাদি লিগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ, তরিকত ফেডারেশন এবং জেপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটে যোগ দেয় ইসলামি ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি (জাফর), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি,বাংলাদেশ জাতীয় দল, এনডিপি, এলডিপির (একাংশ), বাংলাদেশ মুসলিম লিগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.