ফাইল ফটো
সুকুমার সরকার, ঢাকা: ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে মৈত্রী এবং বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন-সহ আগামী একমাস (১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল) সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণভাবে বন্ধই হয়ে গেল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান, রেল ও বাস যোগাযোগ। করোনা ভাইরাস (Corona Virus)-র সংক্রমণ রুখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত সমস্ত রকম পর্যটক ভিসা বাতিল করার পরে কাল থেকেই দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত কমে গিয়েছিল।
শুক্রবার দিল্লিতে বিদেশ, স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে বাস পরিষেবাও। শুক্রবারই ভারত থেকে বিমান ওড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান। তবে বেসরকারি সংস্থার কয়েকটি বিমান বাংলাদেশি যাত্রীদের আনতে দিল্লি, কলকাতা ও চেন্নাই গিয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে আর কোনও বিমান যাতায়াত করবে না। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে পারে।
বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা বিমান, রিজেন্ট, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা মিলে ভারতের তিনটি গন্তব্যে সপ্তাহে ৩৭টি বিমান চালায়। ভারত থেকে এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোর বিমান ঢাকায় আসে। ভারতে ইতিমধ্যেই যাওয়া যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সোমবার পর্যন্ত কয়েকটি বিমান চালানো হবে। যদিও এর ফলে বিপাকে পড়েছেন ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিক ও বাংলাদেশে থেকে যাওয়া ভারতীয়রা। চিকিৎসার জন্য বহু বাংলাদেশি কলকাতা ও চেন্নাইয়ের হাসপাতালে রয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন জানান, চিন, ইটালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটক ভিসা বন্ধ করেছে বাংলাদেশ। ভারত এই তালিকায় না থাকলেও কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ভারতীয়দের বাংলাদেশে সফরে নিরুৎসাহ করছেন তারা। এদিকে, ৫১ জন ভারতীয় নাগরিক নিয়ে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস। আজকেই ছিল এই ট্রেনের শেষ ট্রিপ। আগে থেকেই ১৩৮ জন যাত্রী ভারতে যাওয়ার টিকিট কেটে রেখেছিলেন। কিন্ত, আজ শুধু ভারতীয় ও রাষ্ট্রসংঘের কর্মকর্তাদের ইমিগ্রেশন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অনেকেই শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য কলকাতা যাচ্ছিলেন। কিন্তু, যেতে পারেননি। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন অনেক যাত্রী। তবে ১৪ মার্চের পরেও যাদের টিকিট ছিল এমন ভারতীয় নাগরিকদের আজ যেতে দেওয়া হয়েছে। যে সব বাংলাদেশি আজ ও পরবর্তী তারিখের টিকিট কেটে ছিলেন, তাঁদের টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।
আগামী সোমবার দুপুর থেকে কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রেলওয়ে। এর আগে, শুক্রবার সকালে নির্ধারিত সময়ে ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন না ছাড়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শুক্রবার সন্ধে থেকে আগামী একমাসের জন্য দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের(COVID-19) প্রভাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের সব স্থলবন্দর। শনিবার থেকে বাংলাদেশ-ভারত ফ্লাইট স্থগিত, বাস বন্ধ শুক্রবার থেকেই। গতকাল সন্ধ্যা থেকে দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের চালু থাকা ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রী পারাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে হিলি, বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারি-সহ সমস্ত স্থলবন্দর দিয়ে ভারতগামী যাত্রী পারাপার বন্ধ হতে গিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে শুক্রবার থেকে যাত্রী পারাপার বন্ধের কথা থাকলেও ভারত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই যাত্রী পারাপার বন্ধ করে হয়। তবে স্থলবন্দরগুলি দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধের কোনও নির্দেশ পায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.