ফাইল ফটো
সুকুমার সরকার, ঢাকা: সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আমফান পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি লন্ডভন্ড করে দিয়েছে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলির বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই আঘাতের দগদগে ঘা এখনও বয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের মাঝে বাড়ছে করোনার সংক্রমণও। দুদিক থেকে আসা এই সাঁড়াশি আক্রমণের মাঝেই ফের গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো আসতে চলেছে নতুন একটি ঘূর্ণিঝড় (cyclone)। উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় এখন থেকেই চোখ রাঙাচ্ছে সে। তবে ঠিক কবে এটি তাণ্ডব চালাবে তা এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি আবহাওয়া দপ্তরের তরফে।
বায়ুচাপের তারতম্যের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তার সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর ফলে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। মঙ্গলবার দেশবাসীকে সতর্ক করে এই তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ওই সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যে ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালি, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালি, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিও হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রকোপে গত বছরে হওয়া বুলবুলের চেয়ে ৩ গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বন বিভাগের গঠিত চারটি কমিটির প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে উঠে এসেছে এই চিত্র। তাতে বলা হয়েছে, আমফানের ফলে সুন্দরবনের ১২ হাজার ৩৫৮টি গাছ ভেঙেছে। বন বিভাগের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার। ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের ৪ হাজার ৫৮৯টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফান গত ২০ মে দুপুরের পর সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। এতে বাংলাদেশে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সেই সময় এই ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে ছিল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.