সুকুমার সরকার, ঢাকা: ইতিহাস সৃষ্টি করে শেষ হল ‘অপারেশন টোয়ালাইট’। মঙ্গলবার রাত আটটায় সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে এই অভিযানের অানুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন সেনা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ব্রিগেডিয়ার ফখরুল আহসান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সেনাবাহিনী এই অভিযানে অংশ নেয়। সিলেটের জঙ্গিবাড়ি আতিয়া মহলে নিহত চার জঙ্গির মধ্যে একজন পুরুষ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে, আর এক মহিলা জঙ্গি নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশের ধারণা। সেনাবাহিনী ওই দুজনের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর মঙ্গলবার ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। বাকি দুটি লাশ এখনও ওই জঙ্গি আস্তানার ভেতরে রয়েছে। সেগুলিল এখনও সরানো হয়নি বলে মোগলাবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজল জানিয়েছেন। দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার ওই বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভবনটি ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার সকালে সেখানে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। সোমবার রাতে ওই ভবন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা জানিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ভেতরে চার জঙ্গির লাশ পেয়েছেন তারা। এর আগের দিন ২ জঙ্গি সেনা সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়।
অন্যদিকে, আতিয়া মহলে অভিযান চালাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। তাঁর শরীরের পাশাপাশি চোখের মধ্যেও বোমার স্প্লিণ্টার ঢুকেছে৷ প্রথমে সিলেট ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয় আজাদের কিন্তু চিকিৎসার উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে৷ ব়্যাব কর্মকর্তা মেজর আজাদ ভর্তি রয়েছেন ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে৷
চারদিন ধরে চলা এই জঙ্গি অভিযানের পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফকরুল হাসান বলেন, ‘নিহত জঙ্গিদের শরীরে বিস্ফোরক বাঁধা৷ আতিয়া মহলেও বেশ কিছু আইইডি রয়েছে৷ সেগুলি নিষ্ক্রিয় করা বেশ ঝুঁকির৷ সম্পূর্ণ বাড়িটিতে যে পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে, তা বিস্ফোরণ হলে আশপাশের এলাকাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বিস্ফোরকগুলি সরানো হচ্ছে৷ এলাকাবাসীদেরও অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
এদিকে, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন অধিকর্তার মতে, নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষনেতা মইনুল ইসলাম ওরফে মুসার ওই বাড়িটিতে থাকার প্রমাণ ছিল গোয়েন্দাদের হাতে। তাই মনে করা হচ্ছে নিহত চারজনের মধ্যে একজন মুসা। তবে বিস্ফোরণে মৃতদেহ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চেহারা দেখে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সিলেট থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। নিহতদের শরীরের বিভিন্ন নমুনার সাহায্যে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.