ছবি: প্রতীকী
সুকুমার সরকার, ঢাকা: পরপুরুষে মজেছেন স্ত্রী! এই সন্দেহে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে খুনের পর দেহ ২১ টুকরো করে ফ্রিজে লুকিয়ে রাখল স্বামী। সুযোগ বুঝে প্রতি রাতে বাড়ির পাশের ডোবায় একটি করে দেহাংশ ফেলল সে। ছ’দিন ধরে এ কাজ করে সে। তবে খণ্ডিত মাথা প্লাস্টিকে জড়িয়ে ফেলে। এরপর বাড়িওয়ালাকে জানায়, তার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হন। হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। একথা জানিয়ে বাড়ি ছাড়ে অভিযুক্ত। ঘটনায় এগারো মাস পর অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে স্ত্রীকে খুনের শিউরে ওঠা কাহিনি।
জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে এসএসসি এবং ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করে অভিযুক্ত যুবক রাসেল। জীবিকার তাগিদে প্রথমে ঢাকা এবং পরে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে সে। ফতুল্লার বিসিকে রনি নিট কম্পোজিটে রাসেল এবং পাশের ফারিহা গার্মেন্টে তানজিনা চাকরি করতেন। ওই সময় দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাসেল তানজিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তবে প্রত্যাখ্যাত হয় সে। পরে রাসেল ২০১৯ সালে মোনালিসা নামে একজনকে বিয়ে করে। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে রাসেলের বিয়ের খবর পেয়ে তানজিনা দ্রুত নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। ওই সময় তানজিনার সঙ্গে রাসেলের আবারও যোগাযোগ হয়।
পরে তারা পরিবারের অগোচরে বিয়ে করে। আদর্শনগর এলাকায় মহম্মদ নোয়াবের বাড়ির তৃতীয় তলায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে। পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারের পর রাসেলের দাবি তানজিনা একাধিক পুরুষের সঙ্গে কথা বলত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অশান্তি দানা বাঁধে। ঘটনার রাতেও রাসেল তানজিনাকে ফোনে কথা বলতে দেখে। মারধর করে। অশান্তির মাঝেই রাসেল ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে তানজিনার গলায় আঘাত করে। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জ্ঞান হারায়। পরে রাসেল বঁটি দিয়ে দেহ থেকে তানজিনার মাথা আলাদা করে। দু’টি হাত এবং পা কেটে আটটি কেটে মোট ১৬টি টুকরো করা হয়। ধড় থেকে কোমর পর্যন্ত ৩-৪ টুকরো করা হয়। প্রতি রাতে ছাদ থেকে পাশের ডোবায় একটি করে টুকরো ফেলে রাসেল।
এদিকে দেহাংশ ডোবায় ফেলার পর বাসনপত্র, খুনে ব্যবহৃত বঁটি, তোশক ও বালিশ নিয়ে রাসেল সোনারগাঁয়ের দাউদপুরের একটি মেসে থাকতে শুরু করে। সেখানে দিনতিনেক ছিল সে। আদর্শনগরের বাড়ির প্রায় ১০ হাজার টাকা ভাড়া না মিটিয়েই তা ছেড়ে চলে যায় রাসেল। বাড়ির মালিক নোয়াব পরে রাসেলকে ফোন করে। ফ্রিজ বিক্রি করে বকেয় ভাড়া নিতে বলে রাসেল। বাড়িমালিকও এক ভাড়াটিয়ার কাছে ফ্রিজটি ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। বাকি ৩ হাজার টাকা রাসেলের কাছে পাঠিয়ে দেন বাড়িমালিক। এদিকে, তানজিনার কোনও খোঁজ না পেয়ে তার ভাগ্নে পলাশ ফতুল্লা মডেল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শুরু হয় তদন্ত। থানা থেকে রাসেলকে ফোন করা হয়। সে সোনারগাঁয়ের মেসে আসবাবপত্র রেখেই সাভারে প্রথম স্ত্রী মোনালিসার বড় বোন আশার কাছে চলে যায়। এরপর সেখানেই থাকতে শুরু করে। তবে সম্প্রতি গ্রামের বাড়ি রংপুরে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআই সূত্র আরও জানায়, গ্রেপ্তারি এড়াতে রাসেল ২৫টি মোবাইল ফোন এবং ১৫টি সিম বদল করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তানজিনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। রাসেলকে গ্রেপ্তারির পর দেওভোগ আদর্শনগর এলাকার একটি ডোবা থেকে ১৯টি হাড় উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া হাড়গুলি তানজিনার কিনা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.