ফাইল ছবি
সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমারের টালমাটাল পরিস্থিতির জেরে বহু বছর ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। তাঁদের জন্য তহবিল বাড়াতে আইওএম (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা)-এর কাছে একাধিকবার আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু পদ্মাপারে পতন ঘটেছে হাসিনা সরকারের। এখন বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। মায়ানমারে চলা সংঘর্ষের জেরে এরই মধ্যে নতুন করে ৪০ হাজার রোহিঙ্গার আগমনে গভীর উদ্বেগে পড়েছে ইউনুস সরকার। আশ্রয়ের জন্য এখনও সীমান্তে অপেক্ষা করছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
বুধবার ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ে মো ঢাকায় বিদেশমন্ত্রকে উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেন সঙ্গে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করেন। তাঁকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া জানা গিয়েছে, মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত মো চলমান অস্থির পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে নেন। তাঁর ব্যাখ্যা, “২০২৩ সালের নভেম্বরে আরাকান সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিরতি ভাঙার কারণে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা বিলম্বিত হয়েছে। মায়ানমারের সেনাদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য আমাদের সরকার বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞ।”
মাস দেড়েক আগেই বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। আলোচনায় উঠে আসে রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গও। হাসিনার ক্ষমতায় থাকার সময় এই শরণার্থীদের নিয়ে ঢাকার অবস্থান যা ছিল, এখনও তাই থাকবে। রোহিঙ্গাদের সাহায্য অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে ইউনুস জানান, “বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এই সরকার তাঁদের সহায়তা করব। রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মহলের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাঁদের মায়ানমারে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রয়োজন।” কিন্তু বৃহৎ সংখ্যায় রোহিঙ্গা প্রবেশ করায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ইউনুস সরকারের। ফলে এখন এই রোহিঙ্গা ইস্যুকে কীভাবে সামাল দেয় তারা সেদিকেই নজর ওয়াকিবহাল মহলের।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে মায়ানমার সেনাবাহিনীর ‘গণহত্যা’ ও ‘নিপীড়নে’র মুখে দেশটি থেকে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সবমিলিয়ে মিলিয়ে এখন ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে বসবাস করছে। এছাড়া হিংসা, মানবপাচার এবং মাদক কারবারের কারণে ভয়ানক হয়ে উঠেছে সেদেশের একাধিক রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি। যা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেয়েছে হাসিনা সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মায়ানমার। সংঘাতে জড়িয়েছে বার্মিজ সেনা তথা ‘টাটমাদাও’ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যার প্রভাব পড়ছে ভারত, বাংলাদেশের মতো পড়শি দেশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.