সুকুমার সরকার, ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা বা সংরক্ষণ সংস্কারের দাবি ঘিরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শাসকদলের ছাত্রলিগের মধ্যে সংঘর্ষ হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। তাতেই এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। আহত ৪০০ জন। আগেই জানা গিয়েছিল বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ২৯৭ জনের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুর তিনটে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রলিগের সংঘর্ষ বাঁধে। এর পর সেই ঝামেলা গোটা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক ছাত্রীও রয়েছেন। আহতদের প্রায় সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এদিন গভীর রাতে ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের অভিযোগ, ছাত্রলিগের সদস্যরা দুই দফায় হামলা চালায়। অস্ত্রধারী বহিরাগতদের নিয়ে আসে তারা। পুলিশকেও আক্রমণ করে।
দুপক্ষের অশান্তি চরমে পৌঁছলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। হিংসাত্বক আন্দোলনে ইটবৃষ্টির পাশাপাশি লাঠি নিয়ে মারামারি চলে। অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন বলে খবর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আদালত পড়ুয়াদের সংঘর্ষ থামিয়ে ক্লাসে ফেরার অনুরোধ করলেও শোনেনি দু’পক্ষই। পুরনো সংরক্ষণের নীতির বদলে মেধা-ভিত্তিক সংরক্ষণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাংশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। শাসক দল আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলিগের সঙ্গে সংঘর্ষে ওই বিক্ষোভই এদিন হিংসাত্বক হয়ে ওঠে।
আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলিগের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিবৃতি দিয়ে তারা বলে, ‘বাংলাদেশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন ও নিজস্ব সংবিধানের অধীনে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেসের অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করতে হবে। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’ ছাত্রলিগের হামলার নিন্দা জানিয়েছে আমেরিকাও। বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনের সকল বিষয় কড়াভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সাংবাদিক সম্মেলনে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারে বলেন, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক পদ্ধতির পক্ষে কোটা বাতিলের (সংস্কার) দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যে কোনও গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.