সুকুমার সরকার, ঢাকা: রবিবার বাংলাদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ২২ জন রোহিঙ্গা জঙ্গিকে। এরাই মায়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা হিন্দুদের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। নিজেদের অসহায় শরণার্থী বলে পরিচয় দিয়েছিল। ধৃতদের মধ্যে হিন্দুদের গণহত্যার মূল পাণ্ডা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় পাকিস্তান মদতপুষ্ট এই রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরেই রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের ভারতে থাকতে দেওয়ায় নারাজ নয়াদিল্লি। তার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বারবার সমালোচিতও হতে হয়েছে সরকারকে। রাজনীতির অন্দরমহলে মতপার্থক্য থাকলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের সুরে সুর মিলিয়েছে শেখ হাসিনা প্রশাসনও। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব দেওয়া দেশের পক্ষে বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে বলে মত ঢাকার। উদ্বাস্তুদের কূটনৈতিক তৎপরতায় মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে এ মাসেই ওই দেশে যাবেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
[সৌদি রাজপ্রাসাদে বন্দুকবাজের হামলা, ২ নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু]
রবিবারের ২২ জনের গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রমাণ করল, দুই দেশের আতঙ্ক অমূলক নয়। এক সংবাদসংস্থার দাবি, জঙ্গিমহলে ‘বস’ নামে পরিচিত জুনুনি ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভ্যাশন আর্মি’-র (আরসা) সদস্য। জন্ম পাকিস্তানে। বড় হয়ে ওঠা সৌদি আরবে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও নাশকতামূলক প্রচারে সক্রিয়। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের আর্থিক মদতেই মায়ানমারে নাশকতামূলক কাজকর্ম চালায় সে। রবিবারের ঘটনায় আর্সির পাক যোগ ফের স্পষ্ট হল। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করায় বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “শরণার্থীদের অনুপ্রবেশের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছে বাংলাদেশি সেনা। এক বছরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না হলে আমরা একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হব শরণার্থীদের। এছাড়া উপায়ও নেই।” জঙ্গিদের পাক যোগ নিয়ে তিনি বলেন, “ধর্মীয় ও আঞ্চলিক সম্প্রীতি ভঙ্গের কালো ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের। ওরা বরাবরই এই অমানবিক কাজ করে এসেছে। যদিও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দাবি, বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে পাকিস্তান। সুতরাং দেশে পাকিস্তান বা আইএসআইয়ের জঙ্গিবাদে সরাসরি মদত দেওয়ার প্রসঙ্গটি অবান্তর। তবে ওই দেশ থেকে অন্য পথে সন্ত্রাসবাদের আমদানির বিষয়টি উড়িয়ে দেননি তিনি।
বাংলাদেশের মায়ানমার সংলগ্ন কুতুপালংয়ের পশ্চিমপাড়া। সেখানকারই এক পোলট্রি ফার্মে রয়েছেন রোহিঙ্গা হিন্দু শরণার্থীরা। প্রায় ৫০০ জনের বেশি রয়েছেন সেখানে। তাঁদের দাবি, শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণেই তাঁদের উপর হামলা করছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। ‘আরসা’ সংগঠনের রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গিরা তাঁদের নৃশংস আক্রমণ করেছে। ফকিরাপাড়া আলাকিয়ানদের আক্রমণে প্রায় ১০৮ জন হিন্দু প্রাণ হারিয়েছেন বলে শরণার্থীদের। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হবে বলে ইঙ্গিত দিল চিন। এই ইস্যুতে মায়ানমারকে সমর্থন জানিয়েছে চিন। কিন্তু, বাংলাদেশেও চিনের কয়েকশো কোটি ডলারের আর্থিক বিনিয়োগ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রয়েছে। ফলে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে এবং সামরিক বন্ধু মায়ানমারকেও চটাতে চাইছে না চিন।
[ট্রাম্পকে গুন্ডা, যুদ্ধপিপাসু বলে আক্রমণ উত্তর কোরিয়ার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.