সুকুমার সরকার, ঢাকা: চিকিৎসা করাতে এসে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণটাই চলে যাবে, তা তো দুঃস্বপ্নেও আসেনি৷ অথচ বাস্তব বড়ই রূঢ়৷ তাই ভিন শহরে বিদেশি গাড়ির চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ২ বাংলাদেশিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে৷ শুক্রবার গভীর রাতে লাউডন স্ট্রিটে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত ঢাকার মইনুল আলম এবং তানিয়া ফারহানার দেহ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে সমাধিস্থ করা হল আজ৷
গ্রামীণ ফোনের রিটেল ম্যানেজার কাজি মহম্মদ মইনুল আলমকে রবিবার দুপুরের পর তাঁর নিজের জায়গা ঝিনাইদহে ভুটিয়ার গতি রসুলপুর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ধর্মীয় আচার শেষে ওই মাঠেই তাঁদের পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত করা হয়৷মইনুল আলম শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, গ্রামীণ ফোনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিধবা স্ত্রী, একমাত্র শিশুপুত্র ও ঝিনাইদহের গণ্যমান্যরা৷ তানিয়াকে সমাধিস্থ করা হয়েছে কুষ্টিয়ার চান্দুর গ্রামে৷
রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ পেট্রাপোল-বেনাপোলের আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে স্বজনদের কাছে মইনুল ও তানিয়ার মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ৷ তা গ্রহণ করেন মইনুলের খুড়তুতো ভাই রহমতুল্লা জিহাদ৷ আরেকদিকে, ফারহানার মৃতদেহ গ্রহণ করেন তাঁর ভাই আবু ও বায়দা শাফিন৷ একটি অ্যাম্বুল্যান্স করে দুই বাংলাদেশির মরদেহ বেনাপোল চেকপোস্ট নিয়ে যাওয়া হয়৷ পরে ইমিগ্রেশনের নিয়মনীতি সেরে তাঁদের আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয় কফিনবন্দি দেহ৷ সেখানে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিজনরা৷
পরিবার সূত্রে খবর, দু’জনেই চোখের চিকিৎসার জন্য ১৪ আগস্ট কলকাতায় এসেছিলেন৷ সঙ্গে ছিলেন মইনুলের খুড়তুতো ভাই জিয়াদ৷ মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসতেন মইনুল, তানিয়া দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু৷এবারও জিয়াদ এবং তানিয়াকে নিয়ে মির্জা গালিব স্ট্রিটের একটি হোটেলে ওঠেন৷ দুর্ঘটনার দিন দুপুরে তাঁরা কলকাতার বিখ্যাত বিরিয়ানি প্রস্তুতকারী সংস্থা আরসালান থেকেই বিরিয়ানি খেয়েছিলেন৷ সেখানে বসেও তাঁরা দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন৷ আর রাত বাড়তে সেই দুর্ঘটনাই তাঁদের জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে এল৷
মইনুল কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকতেন৷ গ্রামীণ ফোনের ম্যানেজার পদে কর্মরত মইনুলের সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী ও চার বছরের ছেলে৷ বন্ধু তানিয়া সিটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার চাকরি করতেন৷ তাঁর বাড়ি ঢাকার মহম্মদপুরে৷ তাঁরা মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসতেন চিকিৎসার জন্য৷ কিন্তু এবার আর কারোরই ঘরে ফেরা হল না৷ মইনুল, তানিয়া গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে গেলেও, অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন মইনুলের খুড়তুতো ভাই জিয়াদ৷ গুরুতর জখম তিনি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.