একার হাতে পাকিস্তানকে শেষ করে দিলেন কুলদীপ যাদব। ছবি: টুইটার
ভারত: ৩৫৬/২ (৫০ ওভার, বিরাট – ১২২*, কেএল রাহুল – ১১১*, শুভমান – ৫৮, রোহিত – ৫৬)
পাকিস্তান: ১২৮ অল আউট (কুলদীপ – ২৫/৫, বুমরাহ- ১৮/১, হার্দিক – ১৭/১, শার্দূল-১৬/১)
ভারত ২২৮ রানে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ৩৫৬ রান উঠতেই ম্যাচের ফলাফল অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তবে তাই বলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে (Pakistan) ২২৮ রানে উড়িয়ে দেওয়া! হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। বাবর আজমদের (Babar Azam) দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জয় পেল রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ভারত (India)। সৌজন্যে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও কেএল রাহুলের (KL Rahul) জোড়া শতরানের পর কুলদীপ যাদবের (Kuldeep Yadav) ২৫ রানে ৫ উইকেট। এই দাপুটে জয়ের সৌজন্যে চলতি এশিয়া কাপের (Asia Cup 2023) সুপার ফোরের লড়াইয়ে বড় জয় দিয়ে শুরু করল ভারতীয় দল। তবে মজার ব্যাপার হল রিজার্ভ ডে-তে বৃষ্টির জন্য ম্যাচ কয়েক বার থমকে যাওয়ার জন্য আর কয়েক ঘণ্টা পরেই এই প্রেমদাসা স্টেডিয়ামের বাইশ গজে শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) বিরুদ্ধে নামবে টিম ইন্ডিয়া।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতে বৃষ্টি বাধ সাধতেই পাক পেসারদের সামনে ‘তাসের ঘর’-এর মতো ভেঙে পড়েছিল ভারতীয় ব্যাটিং। তবে এবার কিন্তু বাজিমাত করল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুলের ব্যাটিং বিক্রমে বেশ চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। আর সেই চাপ থেকে গোটা ম্যাচে বেরোতেই পারল না পাক দল।
বৃষ্টির জন্য রবিবারের ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার আগে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল আগ্রাসী মেজাজেই শুরু করেছিলেন। ফলে প্রথম উইকেটে উঠে যায় ১২১ রান। কিন্তু এরপরেই ছন্দ হারান দুই ওপেনার। শাদাব খানকে মারতে গিয়ে ৪৯ বলে ৫৬ রানে ফিরে যায় হিটম্যান। এর কিছুক্ষণ পর শাহিনের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ৫২ বলে ৫৮ রানে আউট হন শুভমান। এরপরেই নেমে আসে বৃষ্টি। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে বিরাট ১৬ বলে ৮ ও কেএল রাহুল ২৮ বলে ১৭ রানে ক্রিজে ছিলেন। ভারত ২৪.১ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৭ রান তুলেছিল।
সোমবার সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল‘মাদার অফ অল ব্যাটল’। যদিও এদিনও বারবার বৃষ্টি রুখে দাঁড়িয়েছিল। তবে এতে বিরাট ও কেএল রাহুলের কোনও সমস্যা হয়নি। একে বাবর আজমের খারাপ নেতৃত্ব এবং এরসঙ্গে যোগ হয়েছিল হ্যারিস রাউফের আঙুলে চোট। সেই সুযোগে বাইশ গজে ঝড় তুলতে শুরু করেন দু’জন। এদিন বাকি ২৫.৫ ওভারে ঝড়ের গতিতে ২০৯ রান তুলে দেন বিরাট ও রাহুল। একইসঙ্গে তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন অবিচ্ছেদ্য ২৩৫ রান। সেখানে থেকে আর খেলায় ফিরে আসতে পারেনি বিপক্ষ।
রবিবার ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। সোমবার রিজার্ভ ডে-র দিনে শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট শুরু করেন। বিরাটের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে পাক বোলারা দাঁড়াতেই পারেননি। ৯৪ বলে ১২২ রানে অপরাজিত রইলেন টিম ইন্ডিয়ার মহাতারকা। মারলেন ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা। একইসঙ্গে এই ইনিংস খেলে নতুন মাইলস্টোন গড়লেন তিনি।
২৭৭ ইনিংসে ১৩ হাজার রান করলেন বিরাট। টপকে গেলেন শচীন তেন্ডুলকরকে, যিনি ৩২১ ইনিংসে ১৩ হাজার রান করেছিলেন। শাহিনের বলে দু’রান নিয়ে এই মাইলস্টোন গড়লেন তিনি। এরপরের বলেই সিঙ্গলস নিয়ে শতরান পূরণ করেন ‘কিং কোহলি’। একইসঙ্গে একদিনের ক্রিকেটে ৪৭তম শতরান সেরে ফেললেন ভারতীয় দলের মহাতারকা। ফলে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আর দুটি শতরান করলেই শচীনকে ছুয়ে ফেলবেন বিরাট।
অন্যদিকে কেএল রাহুল চার মাস পরে কামব্যাক করে নিন্দুকদের জবাব দিলেন। নাসিম শাহের বলটা লং অনে ঠেলেই দৌড় শুরু করলেন রাহুল। জীবনের দৌড়। ভেসে থাকার দৌড়। তার পরের দৃশ্য রাহুল ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন শূন্যে। প্রেমদাসায় সাররিয়ালিস্ট ছবি। আকাশের দিকে ব্যাট হাতে তাকিয়ে লোকেশ রাহুল।
ফিরে আসা বোধহয় একেই বলে! প্রত্যাবর্তনের রাহুলের দিকে চোখ ছিল সবার। আইপিএল চলাকালীন চোট পেয়েছিলেন। ১ মে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ফিল্ডিংয়ের সময়ে মারাত্মক চোট হয়তো তাঁকে চিরদিনের জন্যই ছিটকে দিত। এক সাক্ষাৎকারে সেই অন্ধকার সময়ের কথা বলেছেন রাহুল, “বল তাড়া করছিলাম। টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমার পরিবার ভেবেছিল চোট হয়তো গুরুতর নয়। ভেবেছিল, খুব একটা বেশি ছিঁড়ে যায়নি টেন্ডন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হয়তো সব ঠিক হয়ে যাব। কিন্তু স্ক্যান রিপোর্ট এলে ভুল ভাঙে। বোঝা যায় পুরোটাই ছিঁড়ে গিয়েছে টেন্ডন। তখনই বোঝা গিয়েছিল অস্ত্রোপচার করতেই হবে। ওই একটাই রাস্তা খোলা আছে।” তার কয়েকদিন আগেই বিয়ে করেছেন সুনীল শেট্টীর মেয়ে আথিয়াকে। অনিশ্চয়তায় মোড়া এক জীবন নব দম্পতির সামনে তখন।
গ্রুপের প্রথম দুটো ম্যাচ খেলতেই পারলেন না। ফিরলেন সুপার ফোরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। সামনে পাকিস্তান। যে কোনও দিন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় বক্স অফিস। এই ম্যাচ মুহূর্তে বাড়িয়ে দিতে পারে একজন ক্রিকেটারের আত্মবিশ্বাস। আবার এই ম্যাচ মুহূর্তে তালগোল পাকিয়ে দিতে পারে সব। সেখানেই খেলে দিলেন ১০৬ বলে ১১১ রানের ইনিংস। মারলেন ১২টি চার ও ২টি ছক্কা। প্রতিটি শটে যেন নিন্দুকদের প্রতি নীরব হুঙ্কার লেখা ছিল। ফলে ২ উইকেটে ৩৫৬ রান তুলে দেয় টিম ইন্ডিয়া। সেই রান চেজ করে পাক ব্যাটিং বিপ্লব ঘটাতে পারবে এমনটা কখনই মনে হয়নি। আর সেটাই হল। প্রথমে জসপ্রীত বুমরা, হার্দিক, শার্দূল দাপট দেখানোর পর বাকি পাক ব্যাটিংকে একাই শেষ করে দিলেন কুলদীপ।
আর কয়েক ঘন্টা পরেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নামবে টিম ইন্ডিয়া। পাক দলের বিরুদ্ধে ব্যাটে-বলে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছিল ভারত। সেই পারফরম্যান্স কি সুপার ফোরের এই ম্যাচেও দেখা যাবে? সেটাই জানার অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.