সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: “কাশ্মীরে গেলে ওরা হয়তো বাকি দুটো ছেলেকেও মেরে দিত”, কাঁদতে কাঁদতে ঘর ভর্তি পড়শিদের সামনে বিড়বিড় করে চলেছেন পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত মণীশরঞ্জন মিশ্রের বৃদ্ধ বাবা। ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তিনি। বুধবার সকাল থেকে নিজের বিছানাতেই বসে রয়েছেন মঙ্গলেশ মিশ্র। যেন নড়াচড়া করার ক্ষমতাও হারিয়েছেন। ভাগ্যের এমনই পরিহাস তাঁদেরও বৃহস্পতিবার জম্মুর কাটরাতে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে তিন ভাইয়ের পরিবার ও বৃদ্ধ বাবা-মা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যেতেন। তাই মঙ্গলবার তাঁরা ট্রেনে রওনাও দিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই দুঃসংবাদ। আনন্দ মুহূর্তেই রূপ নেয় বিষাদের।
বাবা মঙ্গলেশ মিশ্র। মা আশা দেবী। সঙ্গে তাঁদের দুই ছেলে মেজো রাহুলরঞ্জন ও ছোট ছেলে বিনীত। মঙ্গলবার ডালটনগঞ্জ থেকে ফিরে আসেন তাঁরা। বাবা ঝালদা হিন্দি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মেজো ছেলে রাহুলরঞ্জন ছত্তিশগড়ের ফুড ইন্সপেক্টর। বিনীত রয়েছেন অসামরিক বিমান চলাচলে। বৃদ্ধ বাবা মঙ্গলেশ মিশ্র বলেন, “কাশ্মীরে আমরা যদি সবাই যেতাম। তিন ছেলেকেই যদি মেরে দিত ওরা। কি হতো তাহলে?” শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ বাবা। তবে সামাল দিচ্ছেন পড়শিরা।
শিক্ষক বাবা ও মা তাঁদের ঝালদার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িতে একাই থাকেন। ছেলেরা সব কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায়। তাই ভেবেছিলেন পরিবারের সকলে মিলে কাশ্মীরে বেড়াতে যাবেন। কিন্ত তা আর হল না। দর্শন হল না বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের। ছোট ছেলে বিনীত মিশ্র বলেন, “এই ট্যুরটা বহুদিন ধরে আলোচনা করে আমরা বানিয়েছিলাম। বাড়ির সবাই মিলে খুব মজা করতে চেয়েছিলাম। তা আর হল না। দাদাকে হারাতে হল। আমরা যদি ভূস্বর্গে পৌঁছতাম। আমাদের কি হত কে জানে! বৃদ্ধ বাবা-মার কথা ভেবে শিউরে উঠছি। দাদাকে বাঁচাতে পারলাম না। কিন্তু মাঝপথ থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছি।” কফিনবন্দি অবস্থায় ফিরছে মণীশের দেহ। শেষবার তাঁকে দেখার অপেক্ষায় গোটা পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.