ইউসুফ পাঠান। ফাইল চিত্র
মণিশংকর চৌধুরী: নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ ছক্কা-চার মেরে জেতাতে দক্ষ ছিলেন তিনি। প্রথমবারের আইপিএল ফাইনালে ম্যাচের সেরাও হয়েছিলেন তিনি। দুবারের আইপিএল খেতাবজয়ী কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি। সেই ইউসুফ পাঠান (Yusuf Pathan) বুধসন্ধ্যায় জানিয়ে দিলেন, বাংলা তাঁর দ্বিতীয় ঘর।
সাদা শার্ট আর আকাশি নীল জিন্স পরিহিত দীঘল চেহারার পাঠান যখন দৃপ্ত কণ্ঠে বলছেন, ‘বাংলাই আমার দ্বিতীয় ঘর’, তখন তাঁকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বহিরাগত বিতর্ক মুহূর্তে যেন প্রশমিত হয়ে গেল।
ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বহরমপুর তাঁর নতুন রণক্ষেত্র। পাঠানের নাম ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকাকে নিয়ে উঠতে থাকে প্রশ্ন। তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বহিরাগত তকমাও। সুদূর বরোদা থেকে বহরমপুর, এই বঙ্গের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম কেন ঘোষণা করা হল, এই প্রশ্ন বাংলার আকাশ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেটজীবনে বড় ছক্কা হাঁকানোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। বুধসন্ধ্যায় সেরকমই পত্রপাঠ উড়িয়ে দিলেন ‘বহিরাগত’ গন্ধ লাগানো বাউন্সার। পাঠান তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, ”কে বলল আমি বহিরাগত? বাংলা আমার দ্বিতীয় ঘর। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সময়ে এই বাংলাতেই থাকতাম। দীর্ঘদিন পরে আবার কলকাতায় ফিরেছি। আমি এখানেই থাকব। ”
কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সময়ে এই বাংলার সঙ্গে যে ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। তাঁর নাম ঘোষণা ইস্তক দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা নতুন ইনিংস শুরুর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁকে। দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানান পাঠানের লড়াই খুব কঠিন হতে চলেছে। ব্রেট লির মতো দ্রতগামী পেসারকে সামলানো যেমন কঠিন, ঠিক তেমনই কঠিন বহু যুদ্ধের সৈনিক অধীর চৌধুরীর মোকাবিলা করা।
প্রতিটি ইনিংসের শুরুতে উত্তেজনা গ্রাস করে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারকে। মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে নানা চিন্তাভাবনা। এই মুহূর্তে তেমনই চিন্তাভাবনা নিশ্চয় ঘোরাফেরা করছে পাঠানের মননে। পাঠান বলছেন, ”অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলতে নামলে লড়াই কঠিনই হয়। এখানেও লড়াই হবে। আর কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে যখন দ্রুততম পঞ্চাশ রান করেছিলাম, আপনারা দেখেছিলেন সব। এ ব্যাপারে আর বিশেষ কিছু বলার নেই।”
তৃণমূল কংগ্রেস বারংবার বিজেপিকে বহিরাগত তকমা দিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কে ‘ডেইলি প্যাসেঞ্জার’ বলে তোপ দাগা হয়েছিল। তার পরে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে গঙ্গা দিয়ে। ব্রিগেড সমাবেশে চমক দিয়ে ইউসুফ পাঠানের নাম ঘোষণা করে বিরোধী শিবিরকেই তো বলার সুযোগ করে দেওয়া হল! জবাবটা দিলেন স্বয়ং পাঠান, ”বাংলা আমার দ্বিতীয় ঘর। জয় বাংলা।”
পাঠানের ওই জয় বাংলা ধ্বনি শুনে মনে হচ্ছিল তিনি তাঁর ক্রিকেটজীবনের মতোই দারুণ আত্মবিশ্বাসী। বহিরাগত বিতর্ক-তকমাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। বাংলার সঙ্গে তাঁর হৃদয়ের যোগ। ভালোবাসার শিকড় এই বাংলায় জড়িয়ে না থাকলে কেউ কি এতটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.