Advertisement
Advertisement
Lok Sabha Election 2024

সৌমেন্দুর শক্তি অধিকারী পরিবার, উত্তম ভূমিপুত্র, কাঁথিতে কঠিন লড়াই বিজেপি-তৃণমূলের

কাজু, চিংড়ি চাষ আর পর্যটন কেন্দ্র দিঘা, মন্দারমণি বেষ্টিত সৈকত এলাকা কাঁথির লড়াইয়ে ফ্যাক্টর কী কী?

Lok Sabha Election 2024: In depth analysis of Contai constituency
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:March 28, 2024 7:14 pm
  • Updated:March 29, 2024 5:16 pm  

রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: পর্যটন আর মৎস্যচাষে ভর করে ধীরে ধীরে উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে বঙ্গের সৈকত এলাকা কাঁথি (Kathi)। এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবর্তিত হয় এসব পেশা ঘিরে। বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল দিঘা, মন্দারমণি ঘিরে রাজ্য সরকারের অজস্র উন্নয়নমূলক প্রকল্পে আকর্ষণ, সুযোগ সুবিধা যেমন আরও বেড়েছে, তেমনই রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে এই সমস্ত বিষয়। আর বঙ্গ রাজনীতির হাল হকিকত সম্পর্কে সামান্য ওয়াকিবহাল যাঁরা, তাঁরা জানেন, কাঁথির খ্যাতি ‘অধিকারী’ গড় হিসেবে। বছরের পর বছর এই এলাার রাজনীতি অধিকারী পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। এখনও রয়েছে অনেকটাই। তবে রং বদলেছে। প্রথমদিকে কংগ্রেস, তার পর তৃণমূল, এখন বিজেপির ঘাঁটি হয়ে উঠেছে এই এলাকা। গত কয়েকটি নির্বাচনে ঘাসফুল দাপট বেশ খানিকটা ফিকে করেছে গেরুয়া ঝড়। তার বড় কারণ শুভেন্দু অধিকারীর দলবদল। কিন্তু জমি উদ্ধারে পিছিয়ে নেই শাসক শিবিরও। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) তাই কাঁথিতে যথেষ্ট কঠিন লড়াই হতে চলেছে বলেই পূর্বাভাস।

ইতিহাস

Advertisement

১৯৫২ সাল থেকে কংগ্রেসের দখলে ছিল এই গড়। তার পর জনতা দল হয়ে সিপিএমের (CPM) জমি হয়ে ওঠে। ১৯৯৯ সাল অর্থাৎ তৃণমূল প্রতিষ্ঠার ১ বছরের মধ্যেই কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হন তৃণমূলের নীতীশ সেনগুপ্ত। সেই ছিল ইঙ্গিত। তার পর মাত্র একবার সিপিএম ক্ষমতা দখল করেছিল। ধীরে ধীরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে কাঁথিতে পুরোপুরি জোড়াফুল ফোটে। এখন আবার হাওয়া বদল। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বেশিরভাগ জায়গা এখন গেরুয়া রঙের। তবে আসন্ন লোকসভা ভোটে কোন দিকে জনসমর্থন যাবে, তা বলা যাচ্ছে না এখনই।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে (Contai Lok Sabha Election) মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর ও শংকরপুর রয়েছে। এসব জায়গার অর্থনীতি মূলত পর্যটন নির্ভর। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকা কাজু, চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ চাষের জন্য বিখ্যাত। এসবের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু মানুষ জড়িত। সমুদ্র উপকূলের কিছু এলাকায় শুকনো মাছের (শুঁটকি) প্রক্রিয়াজাতকরণও করা হয়। এটি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধান উৎপাদনকারী জেলা।

[আরও পড়ুন: ‘ঘরের বউ হলে ধোলাই দিত’, দিলীপের সমালোচনা করতে গিয়ে ‘বেলাগাম’ তৃণমূল বিধায়ক]

জনবিন্যাস
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ৮৯.৭ শতাংশ হিন্দু ভোটার। বাকি মুসলিম, শিখ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের। তার মধ্যে তফসিলি জাতি-উপজাতি (SC,ST) সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনও রয়েছে।

বিধানসভা কেন্দ্র
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭টি বিধানসভা রয়েছে। সেগুলি হল –

  • চণ্ডীপুর
  • খেজুরি
  • ভগবানপুর
  • পটাশপুর
  • কাঁথি উত্তর
  • কাঁথি দক্ষিণ
  • রামনগর

রাজনৈতিক পরিস্থিতি

১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত টানা সাংসদ ছিলেন বামফ্রন্টের সুধীর গিরি। ১৯৯৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে জয়ী হয় নীতীশ সেনগুপ্ত। ২০০৪ সালে বামফ্রন্ট থেকে জয়ী হয় প্রশান্ত প্রধান। ২০০৯ থেকে ২০১৯ টানা তিনবার তৃণমূলের টিকিয়ে জয়ী হন শিশির অধিকারী। চব্বিশের লোকসভা ভোটে লড়াই হবে তৃণমূলের উত্তম বারিক, বিজেপির সৌমেন্দু অধিকারী। বাম-কংগ্রেসের তরফে এখনও প্রার্থী ঠিক হয়নি। সিপিআই, সিপিএম ও কংগ্রেস – তিনজনের মধ্যে আলোচনা চলছে।

হালফিলের হকিকত

কাঁথিতে অধিকারী পরিবার তৃণমূলের সঙ্গে রাজনীতি করেছে দীর্ঘদিন। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করে। তার পরেই বিজেপিতে যোগ দেন তাঁর ভাই কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারী (Soumendu Adhikari)। আরেক ভাই তমলুকের বিদায়ী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী ও বাবা শিশির অধিকারী সরাসরি বিজেপিতে না গেলেও তৃণমূল অধিকারীদের থেকে দূরত্ব তৈরি করে। শুভেন্দু অধিকারীও তৃণমূল ছেড়ে এসে বিজেপির সংগঠন তৈরিতে জোর দেন।

Calcutta HC orders probe against Soumendu Adhikari on graft charges
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী।

কাঁথি লোকসভার মধ্যে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে চারটি বিধানসভা বিজেপির দখলে। বাকি তিনটি তৃণমূলের। বিজেপির দখলে রয়েছে ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ। তৃণমূলের দখলে রয়েছে পটাশপুর, চণ্ডীপুর, রামনগর। পঞ্চায়েতে তৃণমূল ত্রিস্তরে অধিকাংশ আসন দখল করলেও পিছিয়ে নেই বিজেপি। খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতি একক দখল করে বিজেপি। তবে তৃণমূল বিজেপি ভাঙিয়ে নেওয়ায় তৃণমূলের সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেও বাকি কর্মাধ্যক্ষ কিন্তু বিজেপির। এই ব্লকের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করে। কাঁথি দক্ষিণের কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপি দখল করে। শুধু তাই নয় একাধিক পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে যায়। তৃণমূল ছাপ্পা করে ভোটে জেতে বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি। পালটা তৃণমূলের দাবি, সংগঠনের অভাব রয়েছে বিজেপিতে।

[আরও পড়ুন: ফের বেলাগাম দিলীপ, এবার নির্বাচন কমিশনকে ‘মেসোমশাই’ সম্বোধন বিজেপি প্রার্থীর!]

সম্ভাবনা 

কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন শিশির অধিকারীর (Sisir Adhikari) ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারী। কাঁথিতে অধিকারীদের বড়সড় প্রভাব রয়েছে। পাশাপাশি শিশির অধিকারীর সঙ্গে ত্রিস্তরের শাসক ও বিরোধী দলের মানুষের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে। ছোট ছেলের হয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ময়দানে নেমেছেন। মাঠে নেমেছে তমলুকের বিদায়ী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। তাঁর জনসংযোগ রয়েছে যথেষ্ট। তাছাড়া শুভেন্দু অধিকারীর একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনিও ভাইয়ের হয়ে কাঁথির মাটিতে নামবেন।

Sisir Adhikari made controversial remark on Tamluk Lok Sabha candidate in viral audio
কাঁথির বিদায়ী সাংসদ শিশির অধিকারী। তাঁর ছোট ছেলে সৌমেন্দুু এবারের প্রার্থী।

এদিকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন ভূমিপুত্র উত্তম বারিক। তিনি পটাশপুরের বিধায়ক এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে রয়েছেন। উওম বাবুর বিস্তর জনসংযোগ রয়েছে। তাছাড়া শাসক দলে থাকার কারণে সরকারি উন্নয়ন মানুষের সামনে তুলে ধরে প্রচার করছেন। সেইসঙ্গে দলের মধ্যে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। ফলে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে।

কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী ভূমিপুত্র উত্তম বারিক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement