রমেন দাস: একদা শোষিত শ্রেণির পাশে থেকে সাম্য প্রতিষ্ঠার লড়াই এখন অতীত। সংসদীয় গণতন্ত্রে পথে হেঁটে নিজেদের লক্ষ্যপূরণের স্বপ্ন দেখেন বামপন্থীরা। ভোটযুদ্ধে তাই এবারও নেমে পড়েছে কমরেডকুল। চব্বিশের নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) ইতিমধ্যেই রাজ্যের ১৬ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বামফ্রন্ট। যার মধ্যে বেশ কিছু নবীন মুখে ভরসা রেখে তাঁদের এগিয়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লির লড়াইয়ে। শ্রীরামপুর থেকে সিপিএমের (CPM) হয়ে এবার লোকসভায় ভোটে লড়ছেন দীপ্সিতা ধর (Dipsita Dhar)। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা দীপ্সিতার রাজনৈতিক লড়াই খুব কম দিনের নয়। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের সাক্ষী তিনি। ঝকঝকে মুখ, শানিত ভাষণ দেওয়া মেয়েটি একেবারেই বামপন্থী ঘরানার।
তবে দীপ্সিতার থেকেও বর্তমান বাম রাজনীতিতে অধিক জনপ্রিয় নাম মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee)। তদুপরি বিধানসভা নির্বাচনী লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে DYFI-এর রাজ্য সভানেত্রীর। তবু ভোটযুদ্ধে মীনাক্ষীকে সৈনিক নাকি প্রচারকের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলিমুদ্দিনে বিস্তর তরজা চলেছে লাল চা সহযোগে। এই আবহেই দীপ্সিতাকে প্রার্থী করার পর নতুন জল্পনা উসকে উঠেছে। দীপ্সিতার সঙ্গে কি মীনাক্ষীর কোনওরকম দ্বন্দ্ব আছে? ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে এনিয়ে নিজের মতামত জানালেন সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর।
লাল পার্টির তরুণ ব্রিগেডের বেশ কয়েকটি নাম এখন বেশ জনপ্রিয়। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক-উর রহমান, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষ, সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাত্ত্বিক হোক কিংবা ময়দানের লড়াই, সকলেই মোটের উপর রাজনীতির কমবেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। বামপন্থী আদর্শকে আজকের আয়নায় ফেলে বিশ্লেষণ, উপযোগিতার কথা বলে বাংলার আমজনতাকে তাতানোর চেষ্টা কম করেননি এঁরা। চব্বিশের লোকসভার লড়াইয়ের আগে বামেদের প্রার্থী তালিকায় দেখা গেল সৃজন, সায়ন ও দীপ্সিতার নাম। সৃজন যাদবপুর, সায়ন তমলুক, দীপ্সিতা শ্রীরামপুর থেকে লড়বেন। তিন কেন্দ্রই সিপিএমের জন্য নিঃসন্দেহে কঠিন লড়াই। এদিকে, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নাম এখনও প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। সম্ভবত তাঁকে আর সরাসরি ভোটযুদ্ধে নামাতে চান না বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমরা।
আর এখানেই প্রশ্ন। মীনাক্ষী মূলত গ্রামবাংলার মেয়ে। অনাড়ম্বর সাজ, মেঠো ভাষা, চাঁচাছোলা বক্তব্যে প্রতিপক্ষকে আক্রমণেই আমজনতার নজর কেড়েছেন বাম যুব সংগঠনের রাজ্য নেত্রী। জনপ্রতিনিধিত্বের জায়গায় মীনাক্ষীর গ্রহণযোগ্যতা অনেকের চেয়ে এগিয়ে, সে বিষয়ে মতানৈক্য থাকার কথা নয়। তবে কেন প্রার্থী হলেন না মীনাক্ষী? কেন দীপ্সিতা? আসলে জেএনইউ-র প্রাক্তন ছাত্রনেত্রী আবার অন্য জায়গায় এগিয়ে। তিন ভাষায় সাবলীল হাওড়ার মেয়ের রাজনৈতিক ক্ষেত্র মূলত দিল্লি, অর্থাৎ জাতীয় স্তরে। মাঝেমধ্যে তিনি দক্ষিণের রাজ্যগুলিতেও যান দলের কাজে। সংসদে যাওয়ার জন্য তাই দীপ্সিতাকেই বেশি ভরসাযোগ্য বলে মনে হয়েছে বাম শীর্ষ নেতাদের। তার পরও প্রশ্ন থাকছে। উভয়ের মধ্যে কি চোরা কোনও দ্বন্দ্ব রয়েছে?
এনিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে দীপ্সিতার সাফ জবাব, ”কীসের দ্বন্দ্ব? অন্য কোনও দলে এমন দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। তৃণমূলে তো আছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে বিলকুল নেই। মীনাক্ষীদি, আমি, সৃজন, প্রতীক-উর আমরা সবাই খুব ভালো বন্ধু। আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা সবাই কমরেড। সবাই আন্দোলনে নেমে মার খেয়েছি। নবান্ন অভিযানে গিয়ে মীনাক্ষীদিও মার খেয়ে মাথা ফাটিয়েছে, আমিও পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়েছি। কখনও নিজেদের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না। ভবিষ্যতেও থাকবে না।” দীপ্সিতার আরও সংযোজন, ”এর আগের ভোটগুলোয় আমি তো প্রচারক হিসেবেই কাজ করেছি। শুধু বাংলায় নয়, বাইরে গিয়েও বামপ্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছি।” কিন্তু সব কি এতটাই সহজ-সরল? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে কি না, জানা নেই। তবে ভোটযুদ্ধে শ্রীরামপুর কেন্দ্র তথা দীপ্সিতার কেন্দ্রের ফলাফলেরল দিকে নজর থাকবে সব মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.