বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা, অমিত শাহ এবং রাজু বিস্তা।
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: উত্তরবঙ্গে এবার বিজেপির (BJP) বড় আশঙ্কা দুটি। এক, কোচবিহারে (Cooch Behar) রাজবংশী ভোট কতটা আসবে পদ্ম শিবিরে। কারণ, অনন্ত মহারাজ বেসুরো। বিজেপি নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের রাজ্যসভার এই সাংসদ। তাছাড়া, রাজবংশী ভোটে থাবা বসিয়েছে তৃণমূল। ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনেই তার প্রমাণ মিলেছে। দুই, পাহাড়ে দলের অন্দরের যুদ্ধ। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে অশনি সংকেত দেখছে বঙ্গ বিজেপি। দার্জিলিঙে দলীয় প্রার্থী রাজু বিস্তার (Raju Bista) বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কার্শিয়াংয়ের বিজেপিরই বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। তাই অনন্ত মহারাজের ক্ষোভ প্রশমন করতে ও রাজবংশী ভোট নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কোচবিহারে থেকে ভোট প্রচার শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে, দলের মধ্যে বিদ্রোহ মেটাতে এপ্রিলের প্রথম দিকেই পাহাড় সফরে আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
দার্জিলিং (Darjeeling) লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাহাড়ে দুটি জনসভা করতে পারেন শাহ। পাশাপাশি সেখানে দলের নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে আলাদা করে সাংগঠনিক বৈঠকও করবেন তিনি। পাহাড়ে দলের বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাকে (Bishnu Prasad Sharma) বোঝাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। এদিকে, বাংলায় প্রথম নির্বাচনী সভা ৪ এপ্রিল কোচবিহারে করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৭ এপ্রিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কেন্দ্র বালুরঘাটে ও জলপাইগুড়িতে জোড়া সভা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এখনও পর্যন্ত ১৫টি সভা রাজ্যে করবেন বলে ঠিক রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আরও সাত থেকে আটটি সভা মোদিকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করছে রাজ্য বিজেপি নেতারা। কোচবিহারে রাজবংশী ভোটের কথা ভেবেই সেখানে রাসলীলা ময়দানে সভা হবে মোদির।
কোচবিহারে রাজবংশী ভোট বড় ফ্যাক্টর। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে কোচবিহারের ‘স্বঘোষিত’ মহারাজ অনন্ত রায়কে কাছে টানতে তাঁর অসমের বাড়িতেও গিয়েছিলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার সাংসদ করে বিজেপি। কিন্তু বর্তমানে কিছুটা বেসুরো অনন্ত। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে গুরুত্ব দেয় না বলে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন তিনি। গত নভেম্বরে কলকাতায় অমিত শাহর সভাতেও তিনি আসেননি। দাবি করেন, আমন্ত্রণ করা হয়নি তাঁকে। কোচবিহারের সভা করতে গিয়ে অনন্তর সঙ্গে আলাদা কথা বলতে পারেন মোদি। তাছাড়া, রাজবংশী অধ্যুষিত ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে জেতা আসন হেরে গিয়েছে বিজেপি। ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়কে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করেছে ঘাসফুল শিবির। ফলে রাজবংশী ভোটে তৃণমূল থাবা বসানোর আশঙ্কা গেরুয়া শিবিরে। এদিকে, পাহাড়ে বিজেপি বনাম বিজেপি। দলের প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ রাজু বিস্তার চাপ বাড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন দিয়েছেন কর্শিয়াংয়ের বিদ্রোহী বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীর দাবিতে সরব রয়েছেন বিষ্ণুপ্রসাদ।
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে কার্শিয়াংয়ে আসার কথা অমিত শাহর। জনসভা করে বিজেপির পক্ষে হাওয়া তুলবেন। সেখানে পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন। বিজেপির দার্জিলিং জেলা নেতৃত্ব রাজ্য নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছে বিষ্ণুপ্রসাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য। রবিবার বিকেল পর্যন্ত যা খবর, বিষ্ণুপ্রসাদ নিজের অবস্থানে অনড়। শীঘ্র প্রচারে নামার কথাও বলেছেন তিনি। আজ, সোমবার রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে বিদ্রোহী বিধায়ককে নিয়ে কথা হতে পারে জেলা নেতাদের। এদিকে, সংবাদ প্রতিদিনকে রবিবার বিকেলে বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা জানান, “আমি আমার অবস্থানে অনড় রয়েছি। বিজেপির কোনও নেতা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।” বিষ্ণুপ্রসাদকে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কালচিনির বিজেপি বিধায়ক বিশাল লামাকে। রাজু বিস্তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা না দেওয়ার জন্য বিষ্ণুপ্রসাদকে অনুরোধও করেছিলেন বিশাল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বিশাল লামা জানান, “অনেক বুঝিয়েছিলাম, কিছু হয়নি। আর বোঝানোর বিষয় নেই আমার। রাজ্য নেতারা এবার যেটা বুঝবেন করবেন।” দলের বিধায়কের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বিষয়টা নিয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.