সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনীতির যুদ্ধ অনেকাংশে দাবা খেলার সমান। গণতন্ত্রের ষড়ভুজ ছকে চেক-মেটের দান দিতে হবে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। ‘রাজা’কে ফেলে দেওয়া অত তো সহজ নয়। ধীরে ধীরে জমির ধরন বুঝে তবেই বাজিমাত করার দিকে এগোতে হয়।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Polls) বসিরহাট কেন্দ্রের ‘রাজা’ হল সন্দেশখালি। সেখানকার হাওয়া গরম বছরের গোড়া থেকে। সন্দেশখালির ‘বাঘ’ তথা তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে একের পর এক পর জমি দখলের অভিযোগ ঘিরে যেভাবে গণ-প্রতিরোধে তপ্ত হয়েছিল সন্দেশখালি, তার আঁচ যে ভোট পর্যন্ত থাকবে, তা স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হল, সন্দেশখালি (Sandeshkhali) কাণ্ডের পর, শেখ শাহজাহানকে দল থেকে বহিষ্কারের পরও কি শাসকদলের নতুন মাথাব্যথার কারণ হতে চলেছে বসিরহাট লোকসভা আসন? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বসিরহাট লোকসভা জুড়ে। আসুন, দেখে নেওয়া যাক চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ভোটে বসিরহাট (Basirhat) কেন্দ্রের লড়াই কেমন হতে পারে।
জনবিন্যাস
বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অনেকটাই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সংখ্যালঘু ভোট এখানে প্রায় ৪৯ শতাংশ। হিন্দু (Hindu) ভোট ৫১ শতাংশ। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি এলাকার একদিকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা। অন্যদিকে রয়েছে সুন্দরবন। মহকুমার বিচারে বসিরহাটে রয়েছে দশটি ব্লক।
বিধানসভা কেন্দ্র
এর মধ্যে স্বরূপনগর ব্লকটি বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই লোকসভার অন্যান্য বিধানসভাগুলি কেন্দ্রগুলি –
অতীত নির্বাচনের ফলাফল
লোকসভা কেন্দ্রের মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে বসিরহাটে দাপট দেখিয়েছে বামেরা (Left Front) । ১৯৫১ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয়। জয়ী হন লাল পার্টির প্রার্থী রেণু চক্রবর্তী। বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের আপন ভাগ্নি তিনি। তার পর থেকে একে একে কখনও বাম, আবার কখনও কংগ্রেস, কখনও বাংলা কংগ্রেস এই লোকসভায় জয়ী হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে লাল ফিকে হয়ে সবুজ জোড়াফুল মাথা তুলে দাঁড়ায়। তৃণমূলের (TMC) দখলে চলে যায় বসিরহাট। ২০০৯ সালে প্রথম লোকসভা ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। হাজি নুরুল ইসলামের হাত ধরে সেবার বৈতরণী পার করেছিল রাজ্যের বর্তমান শাসকদল।
২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন প্রয়াত বিধায়ক ইদ্রিস আলি। ২০১৯ সালে বসিরহাটবাসী জনপ্রতিনিধি হিসেবে পান টলিউড সেলিব্রিটি নুসরত জাহানকে। যদিও সাংসদ হিসেবে নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)মানুষের কাছে কোনওদিনই পৌঁছাতে পারেননি বলে ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যেই। এলাকায় যদি বা কদাচিৎ নুসরতকে দেখা গিয়েছে, সংসদে তাঁর উপস্থিতি এবং নিজের সংসদীয় কেন্দ্রের দাবিদাওয়া তুলে ধরা হাতে গোনা। গত ৫ বছরের বসিরহাটের বাসিন্দারা প্রাপ্তির ঝুলি তেমন কিছুই নয়। তার প্রভাব যে শাসকদলের ওপরে এই নির্বাচনে পড়বে, সে কথা অকপটে স্বীকারও করে নিয়েছেন বর্তমান প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম। গোদের উপর বিষফোঁড়া সন্দেশখালির অশান্তি। ফলে বসিরহাট কেন্দ্র নিজেদের দখলে রাখতে ১৫ বছর পর ফের হাজি নুরুল ইসলামেই আস্থা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে গুঞ্জন, এই কেন্দ্র থেকে ভারতীয় পেসার মহম্মদ শামিকে (Md Shami) প্রার্থী করতে চলেছে বিজেপি। আবার নওশাদের আইএসএফও জানিয়েছে, তারা বসিরহাট কেন্দ্রে লড়াই করবে। অর্থাৎ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই লোকসভায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনাই বেশি হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কিন্তু যেভাবে সন্দেশখালি কাণ্ডে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় হয়েছে, তাতে যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে শাসকদলের। তবে বিজেপি এবং আইএসএফের (ISF) নিম্নস্তরের সংগঠন বেশ দুর্বল এই বসিরহাটে। তাই অস্ত্র থাকলেও তার সঠিক নিশানায় প্রয়োগ করার মুন্সিয়ানা নেই বিরোধীদের। যার ফলে শাসকদল জয় নিয়ে আশাবাদী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.