অর্ণব দাস, বারাকপুর: রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মতো কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চল এলাকা বারাকপুরের (Barrackpore) রাজনৈতিক চিত্রেও বদল এসেছিল। তবে যত দিন গিয়েছে, ততই সেই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও দেখা গিয়েছে অস্থিরতা। বিশেষত বারাকপুরের ‘বাহুবলী’ নেতা-সাংসদ অর্জুন সিংয়ের (Arjun Singh) বার বার ‘ফুল’বদলই কারণ। ফলে সামগ্রিকভাবে এলাকার রাজনীতির সমীকরণ মুহুর্মুহু পালটেছে। তাতে বেশ বিরক্ত বারাকপুরবাসী। এসব ডামাডোলের মাঝেও অবশ্য সৌজন্যের ছবি দেখা গেল। প্রবীণ সিপিএম নেতা তথা বারাকপুরের বেশ কয়েকবারের প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎবরণ তোপদারের আশীর্বাদ চাইতে তাঁর বাড়ি গেলেন অর্জুন। সোমবার সন্ধেবেলা তিনি যান নোনা চন্দনপুকুরের বর্ষীয়ান নেতার বাসভবনে। এর আগে বারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকও গিয়েছিলেন তড়িৎবাবুর আশীর্বাদ নিতে।
ঘাসফুল শিবির হোক কিংবা পদ্ম — রং বা দল ঘনঘন বদল করলেও অতীত তো পালটানো যায় না। তাই যাঁকে ‘গুরু’ মেনে রাজনীতির ময়দানে পা রাখা অর্জুন সিংয়ের, তিনি ঘোর শত্রুপক্ষের হলেও আসলে তো শিক্ষক। তাই প্রতিবার নির্বাচনের আগে তাঁর আশীর্বাদ নেওয়ার কর্তব্যটি করে থাকেন অর্জুন। এবারও করলেন। উনিশের মতো চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Polls) বারাকপুর কেন্দ্র থেকে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী হওয়ার পর দোলের সন্ধ্যায় তিনি গেলেন ‘গুরু’ তড়িৎবরণ তোপদারের বাড়িতে। ভোটযুদ্ধে আবারও জয়যুক্ত হওয়ার আশীর্বাদ প্রার্থনা করলেন। বললেন, “ওঁর আশীর্বাদ ছাড়া বারাকপুরে কিছুই হয় না। আশীর্বাদ আমি আগেও নিতে এসেছিলাম। এবারও এলাম।”
তড়িৎবরণ তোপদার (Tarit Baran Topdar) মানেই বারাকপুরের দাপুটে রাজনৈতিক চরিত্র। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলে সিপিএমের (CPM) লাল ফিকে হয়ে এলেও, এ অঞ্চলে এখনও যা টিকে আছে, তা হল এই নাম। রাজনীতিতে সক্রিয়তা কমেছে তড়িৎবাবুর। একমাত্র এলাকার বড় মিটিংয়ে ভাষণ দেওয়া এবং দলকে গাইড করা ছাড়া সেভাবে দেখা যায় না তাঁকে। কিন্তু তাঁর বাড়িতে দিনভর বিভিন্ন দলের নেতাদের আনাগোনা লেগেই থাকে। প্রবীণ রাজনীতিকের পরামর্শ চাইতে আসেন অনেকে। পার্থ ভৌমিক, রাজ চক্রবর্তী, অর্জুন সিংয়ের যাতায়াত প্রায় তেমনই।
বারাকপুরের এই রাজনৈতিক সমীকরণ প্রসঙ্গে মহাভারতের কথা মনে পড়তে বাধ্য। গুরু দ্রোণাচার্যের দুই প্রিয় শিষ্য কর্ণ ও অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে যুযুধান। সকলেই চান, অস্ত্রগুরুর আশীর্বাদে জয়লাভ করতে। মহাকাব্যিক চরিত্ররা সমদর্শী ছিলেন। দুই শিষ্যের প্রতি আশীর্বাদে কোনও পক্ষপাত ছিল না। আর আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘গুরু’ তড়িৎবরণ তোপদারের দুই ‘শিষ্য’ — পার্থ ও অর্জুন বর্তমানে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কারও প্রতি সামান্য হলেও কি পক্ষপাতিত্ব করছেন তিনি? এ পরীক্ষা বোধহয় তাঁর নিজেরও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.