নন্দন দত্ত, সিউড়ি: লোকসভা ভোটের (2024 Lok Sabha Election) মুখে ফের তৃণমূলের নির্বাচনী কমিটি নিয়ে বিভ্রাট। বীরভূমের লোকসভা নির্বাচনী কমিটিতে জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ ওরফে ফয়জুল হক নাম থাকাকে ঘিরে ফের বিতর্ক। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম ও বোলপুর দুটি লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী কমিটির নাম ঘোষণা করেন। তাতে প্রথম ঘোষিত তালিকায় বীরভূম (Birbhum) কেন্দ্রে জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের নাম ছিল না। সেই তালিকায় কোনও তারিখ ছিল না। তবে ১৩ মার্চের সই করা সেই তালিকা ২১ মার্চ সন্ধ্যায় ফের পালটে গেল। প্রথম তালিকায় ৫৭ জনের পরিবর্তে বাড়তি নাম যোগ করে বেড়ে হল ৬১ জন। দ্বিতীয় তালিকায় অবশ্য আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই আগের তালিকা থেকে আলাদা। এবং সেখানে কোনও তারিখ নেই। স্বভাবতই দুটি তালিকা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হল জেলায়। দ্বিতীয় তালিকা প্রসঙ্গে আশিসবাবু বলেন, ‘‘কোনও কারণে প্রথম তালিকা থেকে কাজলের নাম বাদ গিয়েছিল। দ্বিতীয়তে আরও কয়েকটি নাম যোগ করে তা চূড়ান্ত হল।’’
তবে এতেই জট কাটেনি। দ্বিতীয় তালিকা প্রাকাশের কিছুক্ষণ আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় দলের চেয়ারম্যান হিসাবে রাজ্যস্তর থেকে এই তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে তা তুলে দেখান। দ্বিতীয় তালিকা রাজ্য থেকে পাঠান হয়েছে কিনা সে নিয়ে নিরুত্তর থাকলেন দলের প্রবীণ বিধায়ক। উল্লেখ্য, অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) অনুপস্থিতিতে বীরভূমে তৃণমূলের সংগঠন পরিচালনার জন্য পাঁচজনের কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আশ্চর্যজনকভাবে সেই তালিকা থেকে নাম বাদ যায় কমিটিতে থাকা সভাধিপতি কাজল শেখের। পরেরদিন তাঁকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলে মুখ্যমন্ত্রী থেকে ফিরহাদ হাকিম – দুজনেই জানিয়ে দেন, সভাধিপতি হিসাবে প্রচারে কাজল শেখ জেলার সব কেন্দ্রে যাবেন। তাঁকে যেখানে দরকার হবে, সেখানেই ডেকে নেবে কমিটি।
আর বৃহস্পতিবার তালিকা প্রকাশ করে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘দুটি কেন্দ্রে ভোট পরিচালনা করবে পাঁচ জনের কোর কমিটি।’’ কলকাতার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজলকে তার নিজের এলাকা নানুর ও কেতুগ্রাম দুটি বিধানসভা দেখার দায়িত্ব দেন। কিন্তু বীরভূম কেন্দ্রে কাজলকে বাদ দিয়ে ফের তাঁর নাম ঢোকানোয় বিতর্ক শুরু হয়েছে। কাজল অনুগামীদের দাবি, মুরারই, হাসন, নলহাটি কেন্দ্রে কাজলকে ঘিরে যে সংখ্যালঘুদের ভরসা বেড়েছিল। নাম বাদ দিলে সে ভোট অনিশ্চিত ছিল। পালটা যুক্তি হিসাবে কোর কমিটির নেতারা দাবি করেন, একবছর আগে কাজল সক্রিয়ভাবে এসেছেন। তার আগে কি সংখ্যালঘুরা ভোট দেননি? তাছাড়া এলাকার সংখ্যালঘু নেতারা কি চুপচাপ বসে থাকবেন?
আসলে জেলা সভাধিপতি হয়ে কাজল শেখ যেভাবে জেলা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, প্রশাসন থেকে সংগঠনের সব বিষয়ে রাশ ধরতে চাইছিলেন তাতে চিন্তিত হয়ে পড়েছিল অনুব্রত নির্ভর জেলা নেতৃত্ব। তাই কোর কমিটিতে থাকা কাজল শেখের নাম বাদ যেতেই জেলা জুড়ে কোর কমিটির পাঁচ নেতার ছবি ছেপে খয়রাশোল থেকে মুরারই সর্বত্র তোড়ন সাজিয়ে তাঁদের স্বাগত জানানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, সভাধিপতি হিসাবে কাজল শেখের এই দাপাদাপির জেরে জেলার পাঁচ বিধায়ক লিখিতভাবে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ ছিল কাজলের ‘ভাইজান’ ইমেজের জন্য জেলার হিন্দু ভোটের ঘাটতি পড়ছে, দলের সংগঠনের ক্ষতি হচ্ছে, নিজের অনুগামীদের নিয়ে সমান্তরাল জেলা সংগঠন তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তবে এই বিতর্ক প্রসঙ্গে কাজল শেখ মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.