বিবাহ থাকলে বিভ্রাট থাকবেই! যদি তা ছোটখাটো মাপের হয়, তবে তাকে বলা হয় দাম্পত্য কলহ। অশান্তি বেড়ে গেলে, দুজনের পথ দুদিকে বেঁকে গেলেই তখন তা চেহারা নেয় বিভ্রাটের। বছর ভর এমন বেশ কিছু হাই প্রোফাইল বিবাহ ও বিভ্রাটের সাক্ষী থেকেছে দেশবাসী। বছরশেষে ফিরে দেখা সেসব দিন।
বিবাহ:
রাজ-শুভশ্রী:
মিমি চক্রবর্তী নাকি শুভশ্রী৷ জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন রাজ চক্রবর্তী? এ নিয়ে টলিপাড়ায় জোর জল্পনা চলেছিল দীর্ঘদিন৷ শেষমেশ শুভশ্রীকেই বেটারহাফ হিসেবে বেছে নেন পরিচালক৷ মার্চে বাগদান ও মে মাসে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এই লাভবার্ড৷ প্রেম পালটে যায় পরিণয়ে৷ এদিকে মার্চ মাসেই চুপিসারে রাশিয়ান বয়ফ্রেন্ড আন্দ্রে কোসচিভের সঙ্গে বিয়েটা সেরে ফেলেন দক্ষিণী অভিনেত্রী শ্রিয়া সরণ৷
মিলিন্দ সুমন-অঙ্কিতা:
মিঞা-বিবি রাজি তো ক্যায়া করেগা কাজি! এ প্রবাদকেই সত্যি করে হাঁটুর বয়সি প্রেমিকার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধের হ্যান্ডসাম হাঙ্ক মিলিন্দ সুমন৷ অল্পবয়সি গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে প্রেম করার জন্য কম কথা শুনতে হয়নি তাঁকে৷ বয়স কম বলে মন দেওয়া যাবে না, এমন কথা তো কোথাও লেখা নেই৷ সুতরাং নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়েই অঙ্কিতা কোনওয়ারকে জীবনসঙ্গী করেন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ মিলিন্দ সোমন।
হ্যারি-মেগান:
এ বছর মে মাসে রাজকীয় পরিবেশেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান। ব্রিটিশ রাজপরিবারের জাঁকজমক যেন রূপকথাকেও হার মানিয়েছিল। বিয়েতে অতিথি সমাগম থেকে বিশালাকার কেক, খাওয়া-দাওয়া থেকে সাজসজ্জা, সবেতেই ছিল রয়্যাল ছোঁয়া। আমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও।
সোনম কাপুর-আনন্দ আহুজা:
চলতি বছর মে মাসে একের পর এক হাই প্রোফাইল বিয়ের সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব। লাল লেহেঙ্গায় হাজির হয়ে সকলের নজর নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন কনে সোনম কাপুর। ব্যবসায়ী আনন্দ আহুজার সহধর্মিনী হিসেবে নতুন জীবনে পা রেখেছিলেন অনিলকন্যা। বান্দ্রায় বিয়ের আসরে বসেছিল চাঁদের হাট।
নেহা-অঙ্গদ:
সোনম কাপুর ও আনন্দ আহুজার বিয়ে নিয়ে যখন সরগরম বলিউড, ঠিক তখনই চুপিসারে বয়ফ্রেন্ড অঙ্গদ বেদির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন নেহা ধুপিয়া। লোকচক্ষু থেকে বরাবরই সম্পর্ককে অন্তরালে রেখেছিলেন তাঁরা। বিয়েও সারেন আড়ালেই। পরে অবশ্য জানা যায় বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন নেহা। আপাতত স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে চুটিয়ে ব্যাটিং করছেন অঙ্গদ। তবে নেহা একা নন, সে মাসেই পাপারাজ্জিদের নাগালেন বাইরে থেকে দ্বিতীয় বিয়েটা সেরে ফেলেন গায়ক-নায়ক তথা সংগীত পরিচালক হিমেশ রেশমিয়া। প্রেমিকা সোনিয়া কাপুরের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তিনি।
মহাক্ষয় চক্রবর্তী-মদালসা শর্মা:
এ বিয়ের আবার পরতে পরতে ছিল সাসপেন্স। ধর্ষণের অভিযোগ এই বিয়ের আসর থেকে বরকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, তো এই জেল থেকে বেরিয়ে ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসে পাত্র। ঠিক যেন হিন্দি ছবির চিত্রনাট্য। অভিনেতার বিয়ে বলে কথা। এমনটা তো হতেই পারে। তবে কথায় বলে সব ভাল যার শেষ ভাল। তেমনটাই হয়েছিল এই প্রেমের থুড়ি বিয়ের গল্পে। সব বাধা পেরিয়ে মদালসা শর্মাকে বিয়ে করেন মহাক্ষয় চক্রবর্তী ওরফে মিমো। একদম যাকে বলে হ্যাপি এন্ডিং।
রণবীর-দীপিকা:
‘হর এক নায়াব চিজ পে সির্ফ আলাউদ্দিন কা হক হ্যায়, আউর পদ্মাবতী নায়াব হ্যায়।’ ‘পদ্মাবত’ ছবিতে রানি পদ্মাবতীর জন্য এই সংলাপই বলেছিলেন খিলজি। ছবিতে মিলন হয়নি ঠিকই, তবে বাস্তবে সেই নয়াব চিজকে চিরতরে নিজের করে নিলেন রণবীর সিং। ছবির মতো সুসজ্জিত লেক কোমো। রূপকথার মতো একটা প্রেমকাহিনি। সিঁদুরে দীপিকার সিঁথি রাঙিয়ে সেই প্রেমকাহিনিরই মধুর সমাপতন ঘটান রণবীর। আর বুঝিয়ে দেন, ‘বাজিরাও নে মস্তানি সে মহব্বত কি হ্যায়, আইয়াসি নহি।’
প্রিয়াঙ্কা-নিক:
‘এক পরদেশি মেরা দিল লে গায়া।’ নিক জোনাসের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে হয়তো এই গানই গেয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তবে ‘মোটি মোটি আঁখিয়ো মে আসু’ দেননি নিক। বরং যোধপুরের বিয়ের সানাইয়ের সুর পৌঁছে গিয়েছিল সুদূর আমেরিকায়। সেখান থেকেই দেশি গার্লকে পরদেশ নিয়ে যেতে হাজির হয়েছিলেন পপস্টার। আক্ষরিক অর্থেই তারকাখচিত পরিবেশে চার হাত এক হয়েছিল প্রিয়াঙ্কা ও নিকের।
কপিল-জিন্নি:
বিয়ের পিঁড়িতে কপিল শর্মা। না,না, কোনও জোক বা প্র্যাঙ্ক নয়। রিল লাইফের দৃশ্যও নয়। আরে বাবা, কমেডিয়ান কপিলকে কখনওই সিরিয়াস ভাবেন না? বছর শেষে সত্যি করেই প্রেমিকা জিন্নির সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন কমেডিয়ান। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আত্মীয়দের উপস্থিতিতেই হয় বিয়ে।
সাইনা-কশ্যপ:
বছর শেষে চ্যাম্পিয়ন সাইনা নেহওয়াল ও পারুপল্লি কশ্যপ। তাও আবার যুগ্মভাবে। না, কোর্টে নয়, ব্যক্তিগত জীবনে। নির্ধারিত দিনের ২ দিন আগেই নেহওয়াল পরিবারে বেজে উঠেছিল সানাই। শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসেছিলেন ব্যাডমিন্টনের মিক্সড ডাবলস জুটি।
ইশা আম্বানি:
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়? ছিলেন। অমিতাভ বচ্চন কিংবা অরুণ জেটলি? তাঁরাও ছিলেন। হিলারি ক্লিনটন? হ্যাঁ, তিনিও। এককথায় মুকেশ আম্বানির কন্যার বিয়েতে অ্যান্তিলিয়ায় বসেছিল চাঁদের হাট। রাজকীয় বিয়ে বলতে যা বোঝায়, ইশা আম্বানি ও আনন্দ পিরামলের বিয়ে ছিল ঠিক তেমনটাই। বড়লোকের ঘরে জন্মালে সেই সন্তানকে বলা হয়ে থাকে সোনার চামচ মুখে জন্মেছে। সেই প্রবাদেরই বাস্তব উদাহরণ হয়ে রইলেন ইশা আম্বানি।
বিভ্রাট:
মৌনী-মোহিত:
অনেক হয়েছে, আর না। চলতি বছর টেলিভিশনের দুনিয়ায় অতি পরিচিত মুখ মৌনী রায় ও মোহিত রায়নার সম্পর্কটা ঠিক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছিল। অভিনয় করতে গিয়েই একে-অপরের প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু ধারাবাহিকের মতো কয়েকটা পর্ব পর সম্পর্কে ফাটল ধরল। মৌনী নিজেই জানিয়ে দেন মোহিতের সঙ্গে তাঁর ব্রেক-আপের কথা। এমনকী, তাঁরা বন্ধুও নন বলে দাবি করেন মৌনী। তারপর কী হল? তা জানতে নাহয় পরের বছর পর্যন্তই অপেক্ষা করুন।
মহম্মদ শামি-হাসিন জাহান:
শামি-স্ত্রী-সন্তান। ছোট্ট সুখী পরিবার। হঠাৎ একটা ঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দিল। ঝড়ের নাম অভিযোগ। মানসিক অত্যাচার, ধর্ষণের মতো একের পর এক অভিযোগের ঝড় আছড়ে পড়ে ভারতীয় পেসার শামির উপর। প্রতি আক্রমণে ঝড়ের তীব্রতা ও ভয়াবহতা আরও বাড়ে। ফলে অবধারিতভাবে বিচ্ছেদের দিকেই এগিয়ে যায় দাম্পত্য। বর্তমানে তাঁদের দেখে কে বলবে, পরস্পরের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন।
মালাইকা-অর্জুন:
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। তাই বলে কি আর প্রেম করবেন না? না, তেমনটা তো কোথাও লেখা নেই। তাই তো অর্জুন কাপুরের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন খান পরিবারের প্রাক্তন বধূ মালাইকা অরোরা। প্রাক্তন স্বামী আরবাজ খানের কানে সবই পৌঁছায়। কিন্তু একবার যখন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তখন তো আর সেখানে নাক গলানো যায় না। তাহলেই হবে বিভ্রাট। কিন্তু ২০১৯-এ কি অর্জুন কাপুরের সঙ্গে বিয়ে করবেন ‘মুন্নি’ মালাইকা? উমমম… উত্তর জানতে অপেক্ষা করুন আর কী।
অর্জুন রামপাল:
২০ টা বছর যে কোনও মানুষের জীবনেরই বড় অধ্যায়। সেই ২০ বছরের সম্পর্কই ভাঙল অর্জুন রামপালের। ১৯৯৮ সালে মডেল মেহরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অভিনেতার। দুই কন্যাও আছে তাঁদের। বিচ্ছেদের খবর প্রথমে অস্বীকার করলেও গত মে মাসে তা মেনে নেন দুজনই। তবে সে বিভ্রাটের সপ্তাহ দুয়েক কাটতে না কাটতেই শোনা যায়, সার্বিয়ান অভিনেত্রী নাতাশা স্ট্যানকোভিচের সঙ্গে প্রেমপর্ব শুরু হয়েছে অর্জুনের। হায় রে ভালবাসা…।
শোভন-রত্না:
‘…তুই অপরাধী রে।’ ওই শূন্যস্থানটায় ঠিক কার নাম বসবে, ঠিক করেই ওঠা গেল না। শোভন চট্টোপাধ্যায়, রত্না চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনজনই নিজের মতো করে সেই শূন্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করলেন বছরভর। পরকীয়ার অভিযোগ তুলে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের আবেদন জানালেন রত্নাদেবী। আর বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করলেন তাঁর সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। মাঝখান থেকে সাংবিধানিক পদ থেকে দাম্পত্য-প্রেম, সব খোয়ালেন প্রাক্তন মেয়র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.